নিজস্ব প্রতিবেদকঃ অভয়নগরে সড়কের দুই পাশে অপরিকল্পিতভাবে বেশ কটি মাছের ঘের গড়ে উঠেছে। ঘেরের মালিকেরা সড়কটি ঘেরের বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহার করছেন অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা মাছের ঘেরের কারণে ভাঙছে সড়ক। সম্প্রতি যশোরের মনিরামপুর উপজেলার হাটগাছা এলাকায় দুই পাশে মাছের ঘেরের মাঝ দিয়ে গেছে সড়ক। এতে সড়কটি অনেকটা মাছের ঘেরের বেড়িবাঁধের কাজ করছে। মাছের ঘেরের পানির ঢেউয়ের তোড়ে সড়কের বেশ কিছু অংশ ভেঙে গেছে। যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া-মনিরামপুর ভায়া মশিয়াহাটী নেহালপুর সড়কের চিত্র এটি। সড়কের দুই পাশে মাছের ঘেরের কারণে বর্তমানে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।অভয়নগর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, নওয়াপাড়া-মনিরামপুর ভায়া মশিয়াহাটী নেহালপুর সড়কের দৈর্ঘ্য সাত কিলোমিটারের বেশি। এই সড়কের দুই পাশে অপরিকল্পিতভাবে বেশ কটি মাছের ঘের গড়ে উঠেছে। মাছের ঘেরে মালিকেরা সড়কটি তাঁদের ঘেরের বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহার করছেন। ২০০৭ সালে সড়কটি উঁচু করা হয়েছিল। এর পর বছর পাঁচেক আগে পিচঢালাই করে সড়কটি সংস্কার করা হয়। তবে দুই পাশের ঘেরের কারণে সড়ক এখন বেহাল।জানা গেছে, ভবদহ এলাকার পরিবেশ ও প্ররিবেশগত ভারসাম্য রাখতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালের জুন মাসে ভবদহ এলাকায় মৎস্যঘের স্থাপন নীতিমালা প্রণয়ন করে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, সরকারি রাস্তা, স্থাপনা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধকে ঘেরের বাঁধ অথবা পাড় হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। ঘেরমালিককে ঘেরের চারদিকে নিজ খরচে বাঁধ তৈরি করতে হবে, ঘেরের বাঁধের সঙ্গে সরকারি রাস্তা থাকলে ঘেরের বাঁধের উচ্চতা সরকারি রাস্তা থেকে কম হতে হবে। পানিনিষ্কাশনের সুবিধার্থে প্রত্যেক মালিককে ঘেরের বাঁধ অথবা পাড়ের বাইরে কমপক্ষে আড়াই ফুট করে জায়গা ছাড়তে হবে। উভয় ঘেরের পাড়ের মাঝখানে কমপক্ষে পাঁচ ফুট জায়গা থাকবে। এ জায়গা পানিনিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত হবে। কিন্তু তিন বছরেও এ নীতিমালার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নওয়াপাড়া জগবাবুর মোড় থেকে সরখোলা ক্লাব পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। আর সরখোলা ক্লাব থেকে হাটগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার অংশে সড়কের উভয় পাশে মাছের ঘের। সড়কের এই অংশের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। এই অংশ কোথাও কোথাও পিচের ওপর ইট বিছিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। তবে তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। উল্টো মাছের ঘেরের পানির তোড়ে উভয় পাশ ভাঙতে ভাঙতে সড়কটি সংকুচিত হয়ে পড়ছে।এই সড়ক দিয়ে অভয়নগর উপজেলার মানুষ মনিরামপুর উপজেলা সদর এবং সাতক্ষীরা জেলায় যাতায়াত করেন। মনিরামপুরের সুজাতপুর গ্রামের ভ্যানচালক মান্দার মণ্ডল বলেন, ‘মাছের ঘেরওয়ালাদের জন্য রাস্তা টিকছে না। মাছের ঘেরের জলের ঢেউয়ে রাস্তার মাটি, খোয়া ভেঙে পড়ছে। রাস্তার যে অবস্থা, তাতে ভ্যান চালানো যাচ্ছে না।’
ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অভয়নগর উপজেলার ডুমুরতলা গ্রামের রণজিৎ বাওয়ালী বলেন, সরখোলা ক্লাব থেকে হাটগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে কমপক্ষে ২০টি মাছের ঘের রয়েছে। কিন্তু এসব ঘের অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। এসব ঘেরের অনিয়মের কারণে রাস্তায় চলাচলের মতো অবস্থা নেই। এ ব্যাপারে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।এসব অভিযোগের বিষয়ে মাছের ঘেরের মালিক পরেশ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘রাস্তা যেন না ভাঙে, সে জন্য আমি প্রতিবছর প্লাস্টিকের বস্তায় মাটি ভরে বাঁধ দিচ্ছি। কিন্তু পানি ওভারফ্লোর কারণে বাঁধ টিকছে না। ভেঙে যাচ্ছে। ভবদহের জলাবদ্ধতার সমাধান না হলে রাস্তা টেকানো কঠিন হবে।’সড়কটি রক্ষার জন্য দুই পাশে প্রায় তিন কিলোমিটার প্যালাসাইডিং (ধসরোধী দেয়াল) দিতে হবে বলে জানিয়েছে এলজিইডি। এ জন্য ২১ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল।জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী সানাউল হক বলেন, অপরিকল্পিত মাছের ঘেরের কারণে ভবদহ এলাকার কোনো সড়কই টিকছে না। নওয়াপাড়া-মনিরামপুর ভায়া মশিয়াহাটী নেহালপুর সড়কের অবস্থাও খুব খারাপ। সড়কটি উন্নয়নের জন্য ২১ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শিগগিরই সড়কটির দরপত্র আহ্বান করা হবে।
এলজিইডির যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম আনিসুজ্জামান বলেন, ভবদহ এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে অসংখ্য মাছের ঘের গড়ে উঠেছে। এলাকার সড়কগুলো মাছের ঘেরের বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে তৎপর হতে হবে। এটা বন্ধ না করতে পারলে উন্নয়ন–সংস্কার করেও সড়কগুলো রক্ষা করা যাবে না। যতো তাড়াতাড়ি। সম্ভব হয় এ সড়কগুলো মেরাত করা দরকার। তানাহলে সড়ক ভাঙ্গা কিছুতেই ঠেকানো যাবেনা। সকল সড়ক গুলোকেে আবার নতুন করে মেরামত করা দরকার।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট