যশোরে গত কয়েক দিনের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ লোডশেডিং হচ্ছে। এ কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন লাখ লাখ মানুষ। ওজোপাডিকো এবং পল্লী বিদ্যুৎ মিলে ১২ লাখের মতো গ্রাহক রীতিমতো বিরক্ত। তারা এই অবস্থার উত্তরণ চান।তবে, বিদ্যুৎ বিভাগের বলেন ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গ্যাস ও তেল সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে গ্যাস-তেল নির্ভর প্লান্টগুলোতে ঠিকমতো বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও আশার কথা শুনিয়েছেন বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা।যশোরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে লোডশেডিং কমে যেতে পারে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বৃহস্পতিবার থেকে ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হবে। এই ছুটিতে দেশের অধিকাংশ কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে, কমে যাবে গ্যাস ও তেলের চাহিদা। কলকারখানা থেকে সাশ্রয় হওয়া গ্যাস ও তেল ব্যবহার করা হবে বিদ্যুৎ প্লান্টে। তখন বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়বে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। আর বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লে ঈদের ছুটিতে কমে যাবে লোডশেডিং। ফলে, প্রচন্ড এই গরমের মধ্যে হাঁসফাঁস অবস্থায় পড়ে ম্লান হবে না ঈদের আনন্দ।যশোর ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড-ওজোপাডিকো-১ ও ওজোপাডিকো-২ এবং পল্লী বিদ্যুৎ-১ ও পল্লী বিদ্যুৎ-২ এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের আওতাধীন এলাকায় ১১ লাখ ৮২ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এরমধ্যে ওজোপাডিকো-১ এ ৫০ হাজার, ওজোপাডিকো-২ এ ৫৫ হাজার, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এ ৫ লাখ ৩২ হাজার ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এ সাড়ে ৫ লাখের মতো গ্রাহক আছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।যশোর ওজোপাডিকো-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ওজোপাডিকো-১ ও ২ মিলে মোট গ্রাহক রয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার। এরমধ্যে ওজোপাডিকো-১ এর আওতায় ৫০ ও ২ এর আওতায় আছে ৫৫ হাজার গ্রাহক। এছাড়া, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর গ্রাহক সংখ্যা বর্তমানে ৫ লাখ ৩২ হাজার। আর সাড়ে ৫ লাখ গ্রাহক রয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর আওতাধীন এলাকায়।নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম সোমবার জানিয়েছেন, ওজোপাডিকো ১ ও ২ মিলে গতকাল বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৬০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে তারা বরাদ্দ পান মাত্র ২৭ মেগাওয়াট। তিনি জানান, বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ মেগাওয়াট লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত গ্রাহকরা ফোন করে তাদের কাছে অভিযোগ দিচ্ছেন। অথচ তাদের কিছু করার থাকছে না। কারণ এটি জাতীয়ভাবে হচ্ছে।শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ঈদের ছুটি শুরু হলে লোডশেডিং এ রকম থাকবে না। তখন কলকারখানা বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ প্লান্টগুলো আরও বেশি গ্যাস ও তেল পাবে। বৃদ্ধি পাবে উৎপাদন। ফলে, গ্রাহক আরও বেশি বিদ্যুৎ পাবেন।যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর এজিএম (সদস্য সেবা) সাঈদ হোসেন জানিয়েছেন, তাদের আওতাধীন গ্রাহকের সংখ্যা ৫ লাখ ৩২ হাজার। প্রতিদিন তাদের বিদ্যুৎ চাহিদা ১শ’ ২০ মেগাওয়াট। তারা বরাদ্দ পাচ্ছেন ৮৮ মেগাওয়াট। এ কারণে প্রতিদিন ঘাটতি থাকছে কমপক্ষে ৩২ মেগাওয়াট। যা অনেক বেশি লোডশেডিং বলে জানান তিনি।সাঈদ হোসেন আরও জানান, ৩২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিয়ে ৩৫ হাজার গ্রাহকের দিনরাতের চাহিদা মেটানো যায়। যা তারা পারছেন না।পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার মনোহর কুমার বিশ্বাস এর আগে জানিয়েছিলেন, তাদের গ্রাহক সংখ্যা সাড়ে ৫ লাখ। প্রতিদিন গড়ে বিদ্যুৎ চাহিদা ১শ’ ১৬ মেগাওয়াট। বরাদ্দ পাচ্ছেন ৯০-৯২ মেগাওয়াট। ফলে, অন্যদের মতো প্রতিদিন লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারাও।শহর ও গ্রামের গ্রাহকরা বলছেন, দিনে রাতে মিলে চার-পাঁচবার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। মোট কথা কমপক্ষে চার-পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিহীন থাকতে হচ্ছে লাখ লাখ মানুষকে। প্রচন্ড গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ বিহীন ঘরে হাঁসফাঁস অবস্থায় পড়তে হচ্ছে তাদেরকে। গরমের মধ্যে বহু মানুষের শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতো বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণ সম্পর্কে ওজোপাডিকো-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, দেশের বেশিরভাগ বিদ্যুৎ কেন্দ্র গ্যাস নির্ভর। বেশকিছু দিন শিল্প কলকারখানায় গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দেয়া হয়। এ কারণে লোডশেডিং কম ছিল। বর্তমানে ওইসব কলকারখানায় গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। ফলে, বিদ্যুতের ঘাটতি হচ্ছে।যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার মনোহর কুমার বিশ্বাস দাবি করেন, দিনে তেমন একটা লোডশেডিং হচ্ছে না। মূলত সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। জেনারেশন ব্যবস্থা বৃদ্ধি না পাওয়া পর্যন্ত লোডশেডিং কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানান এই বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা। অন্যান্য কর্মকর্তাদের বক্তব্যও একই।এদিকে, বিদ্যুতের এই নাজুক পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণ উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি লিখেছেন, ‘গ্যাস স্বল্পতার কারণে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহও বিঘ্নিত হচ্ছে।’ এ কারণে গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি।স্ট্যাটাসে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে অনেক জায়গাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় স্বাভাবিক হবে।তিনি আরও লিখেছেন, যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্য ও সরবরাহ অন্যান্য সব দেশের মতো আমাদেরকেও সমস্যায় ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে আপনাদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।যশোরের মানুষ এখন অতিষ্ঠ দিনের বেলাও বিদ্যুৎ থাকেনা। রাতে ও থাকেনা সব মিলিয়ে আধা ঘন্টা ও বিদ্যুৎ থাকেনা এতে করে যারা এস এস সি পরিক্ষা দিবে তাদের জন্য এটা একট ক্ষতির কারন। আবার যারা প্রামারী তারা রাতে পড়তে পারেনা। মোট কথা সব দিক দিয়ে ক্ষতির মুখে মানুষ তাই এই সমশ্যা দ্রুত সমাধান করতে হবে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট