যশোরের নোভাক্লিনিকের নার্স ও ডায়ালাইসিস এর বিরুদ্ধে রোগীকে চিকিৎসার অবহেলার কারনে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে রোগীর স্বজনরা। মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে বসে আছেন স্বজনরা।কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন শাহিদা বেগম (৫০)। ডায়ালাইসিসের জন্য তাকে যশোরে নোভা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক জানালেন, রোগীকে রক্ত দিতে হবে। স্বজনরা এনে দেন রক্ত। এসময় শাহিদা বেগমের শ্বাস কষ্ট শুরু হয়।বিষয়টি জানানো হয় নার্স ও ডায়লাইসিস ইনচার্জকে। কিন্তু তারা বসে মুঠোফোন গেম খেলতে থাকেন। শেষপর্যন্ত তাদের অবহেলায় বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) দুপুরে মারা যান ওই রোগী। এমনই অভিযোগ করছেন রোগীর স্বজনরা।তারা বলছেন, রোগী যখন মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন, তখন নার্স ও ডায়ালাইসিস ইনচার্জ মোবাইলে গেম খেলছিলেন। মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিকের সামনে বিক্ষোভ করেছেন স্বজনরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।মারা যাওয়া ওই নারী যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া পশ্চিমপাড়া এলাকার শফিকুল ইসলাম পিন্টুর স্ত্রী।এদিকে ঘটনার পর ক্লিনিকের ম্যানেজারসহ ডায়ালাইসিস বিভাগের ইনচার্জ ও নার্সরা সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন।শাহিদা বেগমের বড় ছেলে বাপ্পী হোসেন জানান, তার মা পাঁচ মাস ধরে কিডনি রোগে ভুগছেন। চিকিৎসকের পরামর্শে চার মাস ধরে এই নোভা ক্লিনিকে তার মাকে ডায়ালাইসিস করিয়ে আসছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে ভর্তি করা হয় ক্লিনিকে।বাপ্পী আরও বলেন, ডায়ালাইসিস করার আগে ক্লিনিকের ডায়ালাইসিস ইনচার্জ সেলিম হোসেন জানান, তার মাকে জরুরি রক্ত দিতে হবে। দুপুরে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কাছে এক ব্যাগ রক্ত এনে দিলে, তারা মাকে রক্ত না দিয়ে অফিসে বসে থাকেন।আহাজারি করতে করতে বাপ্পী বলেন, দিনমজুরি করে সংসার চালাই। ছুটোছুটি করে রক্ত এনে দিয়েও আমার মাকে বাঁচাতে পারলাম না। রক্ত এনে প্রথমে হাসপাতালের এক নার্সকে বললে তিনি বলেন, ‘এখন আমার শিফট শেষ, অন্যজন আসলে দিয়ে দেবে।’ আর একজন মোবাইলে গেম খেলছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মাকে বাঁচাতে পারলাম না।মৃতের মেঝো ছেলে সফিয়ার রহমান আজাদ অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, তাদের মা মারা যাওয়ার পর কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই রেজাউলের নেতৃত্বে একটি ফোর্স ক্লিনিকে আসে। তিনি এসেই মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলেন। এমনকি রোগীর মৃত্যুর সার্টিফিকেটও দেননি। তারা সার্টিফিকেট আর মৃত্যুর বিচার না পেলে বাড়ি যাবেন না বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে জানান। এতে উল্টো তাদের মামলা দেওয়ার হুমকি দেন পুলিশ কর্মকর্তা।তবে মামলা দেওয়ার হুমকির বিষয়টি মিথ্যা দাবি করেন এসআই রেজাউল। তিনি বলেন, আমরা রোগী মারা যাওয়ার খবর পেয়ে ক্লিনিকে আসি। এসে নিয়ন্ত্রণে এনেছি বিক্ষুব্ধ স্বজনদের। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। স্বজনদের মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।নোভা ক্লিনিকের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ মুঠোফোনে বলেন, মারা যাওয়া রোগীকে এর আগেও আমারা ডায়ালাইসিস করেছি। কোনো সমস্যা হয়নি। কি কারণে আজ মারা গেলো আমরাও বুঝতে পারছি না। আর ওই রোগীর চিকিৎসায় কোনো অবহেলা হয়নি।এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, স্বজনরা এখনো আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রোগীর স্বজনরা বলেন আমরা এর সঠিক বিচার চায়। যেন কোন প্রকারআপোষ না করা হয়। তারা আরো বলেন যেন আর কোন রোগী এরকম অবহেলার কারনে মৃত্যু না হয়।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট