নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে মাদক বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে
টাকা লেনদের নগদ ও বিকাশে, ঈদ উপলক্ষে বিপুল মরিমান মাদক মজুত
সীমান্ত জেলা যশোরে মাদক বেচাকেনা কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। সীমান্ত এলাকা থেকে পিকআপ, ব্যাটারিচালিত ভ্যান, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারে অভিনব কায়দায় লুকিয়ে মাদক নেয়া হয় যশোর শহরসহ বিভিন্ন স্থানে। কখনো কখনো শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করা হচ্ছে মাদক বহনে। পুলিশের নজরদারি এড়াতে বিক্রেতারা কৌশলী হয়ে মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে মাদক কেনাবেচা করছে। আর টাকা লেনদেন করছে বিকাশ ও নগদে। শহরের কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য মিলেছে।গোয়েন্দা তথ্য মতে, ঈদ উপলক্ষে যশোরে মাদকের বিপুল মজুত করা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজার বড় কয়েকটি চালান ঢুকেছে। তবে সোর্স ও ব্যবসায়ীদের যোগসাজস থাকায় ওই চালানগুলো জব্দ করা সম্ভব হয়নি।সূত্র জানায়, যশোরে ফেনসিডিলের ‘ডিলার’ রয়েছেন কয়েকজন। এর মধ্যে শহরের ষষ্ঠীতলার রেজা, পুরাতন কসবা গোলামপাড়ার শেখর, শরিফুল ও আমিরুল, শহরতলীর খোলাডাঙ্গায় খোঁড়া কামরুল, সুজলপুরের শরীফ, চুড়িপট্টির সঞ্জয়, বারান্দী মোল্লাপাড়ার রাব্বী, রেলগেট এলাকার কুদরত, সিটি কলেজপাড়ার ইলিয়াস ওরফে কোবরা ইলিয়াস, আরএন রোড়ের রিয়াদ, জিকো, মোমিন, চাঁচড়ার আজাদ অন্যতম।
শীর্ষ মাদক বিক্রেতাদের মধ্যে পরিচিতি রয়েছে লিচুবাগান এলাকার কাইল্যা তপন, টালিখোলা এলাকার উজ্জ্বল, জিহাদ, সুমন, মনু, কাঁঠালতলা এলাকায় বেড়ে টুটুল, পালবাড়ি এলাকার লাভলু, খয়েরতলা এলাকার রবিউল ইসলাম রবির নাম।প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সাথে মাদক কারবারীদের রয়েছে দহরম-মহরম সম্পর্ক। তাছাড়া যারা প্রশাসনের সোর্স হিসেবে কাজ করে তারাই আবার চিহ্নিত মাদক কারবারী হওয়ায় মাদক নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
🌺শেখ মাসুদুজ্জামান, সমন্বয়ক, নাগরিক অধিকার আন্দোলন, যশোর
এছাড়াও বারান্দীপাড়া বৌ বাজারের আরমান, লিচুতলার জাকির হোসেন টুটুল, মোল্লাপাড়া আমতলার শফি, রকি, রাব্বী, সিটিকলেজ পাড়ার জনি ওরফে বস জনি, বারান্দীপাড়া চাতালের মোড়ের পাপ্পু, সালাম, কদমতলার তালেব, খালধার রোডের টনি, শুভ, বেজপাড়ার আকাশ, ঈশারত, বুলবুল, সোহাগ, খোলাডাঙ্গার শিমুল, ইমন, মামুন, টুটুল, মাইকপট্টির নিশান, চাঁচড়া রায়পাড়া কয়লাপট্টির শিলি, হোসেন আলী মরা, আসমা বেগম, সাহিদা, ষষ্ঠীতলায় নিহত হাফিজুর রহমান মরার স্ত্রী রেখা, মৃত বাচ্চু ড্রাইভারের স্ত্রী জবা, রেলগেটের ডালিম, চোরমারা দিঘিরপাড় এলাকার টিয়া, রেলগেট পশ্চিমপাড়া শিউলী, রেলগেট শাহরিয়ার হোটেলের পেছন এলাকার সুমি, পূর্ব বারান্দী মাঠপাড়ার কসাই মনি, রেল রোড ফুড গোডাউন এলাকার শুভ, ধর্মতলা হ্যাচারিপাড়ার ছোটবাবু, আরএন রোড মসজিদ গলির রানা দেদারছে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি শহরের চারখাম্বা থেকে সোনালী ব্যাংক মোড় পর্যন্ত চলতি পথেই মাদক বিক্রি করছে একটি চক্র এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালায় র্যাব। তবে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সটকে পরে তারা। এই বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, শহরের রেল স্টেশন এলাকার রুহুল আমিন ও রবিউল ইসলাম সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এই এলাকায় চলতি পথে মাদক বিক্রি করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী জানান, সন্ধ্যার পর থেকে একটি চক্র বেপরোয়া হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণ পর পর দোকানের সামনে দিয়ে তাদের পায়চারী করতে দেখা যায়। মোবাইলে যোগাযোগ করে মাদকসেবীদের কাছে মাদক বিক্রি করছে এই চক্রটি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র্যাবের গোয়েন্দা সংস্থার একজন সদস্য জানান, বেনাপোল সীমান্তের পুটখালী ও চৌগাছার আন্দুলিয়া সীমান্তে ভারত থেকে অবৈধ পথে ফেনসিডিল নিয়ে আসা হয়। এরপর পিকআপ, ব্যাটারিচালিত ভ্যান, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারে অভিনব কায়দায় সেগুলো লুকিয়ে আনা হয় যশোরে। পৌঁছে যায় অন্যান্য জেলায়ও।ওই গোয়েন্দা সদস্যের তথ্য মতে বদলে গেছে বিক্রির ধরণ। আগে নির্দিষ্ট কিছু স্থানে মাদক বিক্রি হলেও বর্তমানে অফিস ও বাড়িতে মাদক পৌঁছে দেয়া হয়। ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে অর্ডার করলে অফিস ও বাড়িতে পৌঁছে যায় ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজা। মুঠোফোনে কল দিলে ইজিবাইক ও মোটরসাইকেলযোগেও পৌঁছে দেয়া হয়।সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় যশোরে মাদকের সহজলভ্যতা রয়েছে। তাছাড়া মাদক কারবারীরা প্রতিনিয়ত বিক্রি ও মজুতের ধরণ পরিবর্তন করছে। অনলাইনের মাধ্যমে কারবার বেড়েছে। যার কারণে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।
🌺মেজর নাজমুস সাকিব, কোম্পানি কমান্ডার, র্যাব-৬ যশোর
এদিকে যশোর সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় মাদক নির্মূলে বেগ পেতে হচ্ছে প্রশাসনের। এমনটা দাবি করেন নাগরিক অধিকার আন্দোলন যশোরের সমন্বয়ক শেখ মাসুদুজ্জামান মিঠু। তিনি বলেন, একদিকে সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এখানে যেমন মাদকের সহজলভ্যতা রয়েছে, অন্যদিকে প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সাথে মাদক কারবারিদের রয়েছে দহরম-মহরম সম্পর্ক। তাছাড়া যারা প্রশাসনের সোর্স হিসেবে কাজ করে তারাই আবার চিহ্নিত মাদক কারাবারী হওয়ায় মাদক নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মাদকসেবী ও ছোটখাট বিক্রেতারা প্রশাসনের হাতে ধরা পড়লেও আড়ালেই থাকছে মাদক মাফিয়াদের কারবার।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে উঠতি বয়সি ছেলে-মেয়েরা মাদকে জড়িয়ে পড়েছে। এর অন্যতম কারণ মাদকের সহজলভ্যতা। যার কারণে সমাজে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। তিনি দাবি করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে মাদকের বেচাবিক্রি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করি যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে তাদের অধিকাংশই খুচরা ব্যবসায়ী বা মাদকসেবী। যদি রাঘববোয়ালরা ধরা পড়তো তাহলে এই জেলাকে মাদকমুক্ত জেলা ঘোষণা করা সম্ভব ছিলো।
মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে যশোরে কাজ করছে প্রশাসন। এমনটা দাবি করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক আসলাম হোসেন জানান, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা সবাই শক্ত অবস্থানে রয়েছি। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জেলা পুলিশ, ডিবি, র্যাব সব সময় যশোরকে মাদকমুক্ত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জানান চলতি বছরে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোরের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল, গাঁজা, ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক উদ্ধার করেছে। জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ২৬৯ টি মামলায় ২৭৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জেলা পুলিশ, ডিবি, র্যাব সব সময় যশোরকে মাদকমুক্ত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে। মাদকের বিরুদ্ধে আমরা সবাই শক্ত অবস্থানে রয়েছি। চলতি বছর ২৬৯ মামলায় ২৭৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
🌺আসলাম হোসেন, উপ-পরিচালক, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর
মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছে র্যাব-৬ যশোর এমনটা দাবি করেন যশোর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাজমুস সাকিব। তিনি জানান, সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এখানে মাদকের সহজলভ্যতা রয়েছে। তাছাড়া মাদক কারবারীরা প্রতিনিয়ত বিক্রি ও মজুতের ধরণ পরিবর্তন করছে। অনলাইনের মাধ্যমে কারবার বেড়েছে। যার কারণে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। তবে মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
অন্যদিকে মাদক বিক্রেতা-সেবনকারী ও তাদের আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) বেলাল হোসাইন। তিনি বলেন, অভিযানের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মাদকের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।আর টাস্কফোর্সের মাধ্যমে যশোরে মাদক নিয়ন্ত্রণের কথা জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এস এম শাহীন
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট