নিজস্ব প্রতিনিধ পাবনা থেকে এস এম মনি সরকার:
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার উত্তর মেন্দা মহল্লার বাসিন্দা হরেন্দ্রনাথ রায়ের ছেলে বিদ্যুৎ কুমার রায়। ১৯৭৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা পেশায় ছিলেন একজন সাইকেল মেকার। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয় বিদ্যুৎ কুমার রায়। অর্থের অভাবে তার বাবা হরেন্দ্রনাথ রায় ছেলেকে পড়ালেখার খরচ, বই-খাতা-কলম ও পোশাক জোগাড় করে দিতে হিমশিম খেতেন। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম ও সাধনায় শত বাধা অতিক্রম করে আজ বিদ্যুৎ কুমার রায় হয়েছেন বিসিএস ক্যাডার।বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্টের টিচার ট্রেনিংয়ে প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে কর্মরত। তার লেখা রসায়ন বইটি ৯ম-১০ম শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে স্থান পেয়েছে।
জানা যায়, বিদ্যুৎ কুমার রায় ভাঙ্গুড়া উপজেলার শরৎনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। ১৯৯০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় গণিতে লেটার নিয়ে ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২য় বিভাগে পাস করেন। হাজী জামাল উদ্দীন ডিগ্রি কলেজ থেকে ১৯৯২ সালে ২য় বিভাগে এইচএসসি পাস করেন।
পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন বিদ্যুৎ কুমার রায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৬ সালে বিএসসি (সম্মান) ১ম শ্রেণিতে ২য় হন ও ১৯৯৭ এমএসসিতে রেকর্ড পরিমাণ নম্বর নিয়ে ১ম শ্রেণিতে ১ম স্থান হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। এ জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গোল্ড মেডেল ও বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
এসএসসি ও এইচএসসি পাস করার পর বিদ্যুৎ কুমার রায়ের ইচ্ছা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার। কিন্তু অনেকেই তাকে ভাঙ্গুড়ায় থেকে বাবাকে সহযোগিতার কথা শোনান। পরে তাদের কথা অনুযায়ী হাজী জামাল উদ্দীন ডিগ্রি কলেজে বিএসএসে ভর্তি হন। মনস্থির করেন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করবেন। সেই জন্য এক বছর বাদ দিয়ে পরের বছর ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এরপর থেকে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম ও শ্রমের বিনিময়ে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে পড়ার সুযোগ পেয়ে যান।সেখানে ছাত্রজীবনে প্রচুর পড়াশোনার মধ্য দিয়ে সময় কাটিয়েছেন। এমনকি পড়ালেখা ছাড়া অন্য কোনো জগৎ তিনি জানতেন না। সেই কারণেই তিনি ১৯৯৬ সালের বিএসসি (সম্মান) ১ম শ্রেণিতে ২য় ও ১৯৯৭ সালের এমএসসি পরীক্ষায় রেকর্ড পরিমাণ নম্বর নিয়ে ১ম শ্রেণিতে ১ম স্থান হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। অনেক ভালো ফলাফল করার কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গোল্ড মেডেল ও বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। এরপর তার অদম্য চেষ্টা ও ইচ্ছার কারণে ২২তম বিসিএস পরীক্ষায় সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাবেক নির্বাচিত সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব শেখ আব্দুস সামাদ মাষ্টার (অবঃ প্রধান শিক্ষক) বলেন, সরকারি ছুটি হলেই জন্মভূমি ভাঙ্গুড়ায় আসেন বিদ্যুৎ কুমার রায়। ছুটিতে এসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়াসহ শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেন। নিজেদের লক্ষ্য স্থির করা, লক্ষ্যে অটুট থাকা, একাগ্রতা, নিষ্ঠা পরিশ্রম আর ভাগ্য মিলিয়েই সাফল্য আসে। তাই চ্যালেঞ্জ থাকলেও দারিদ্র্যের মধ্যে যে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব সেটি প্রমাণ করেছেন বিদ্যুৎ কুমার রায়।
বিদ্যুৎ কুমার রায় তার অতীত জীবনের স্মৃতিচারণ করে একুশে সংবাদ. কমকে বলেন, কোন সফলতাই মসৃণ নয়। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে কাঙ্ক্ষিত সফলতা পাওয়া যায়। আমার পথটাও মসৃণ ছিলো না। কোনো রকমে পুরোনো পোশাক আর পুরোনো স্যান্ডেল পরে স্কুলে যেতাম। স্কুলে পড়ালেখা কম পারার কারণে বসতে হতো পেছনের বেঞ্চে। দরিদ্রতা মানুষের জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। এটাকে কেউ যদি সহ্য করে এগিয়ে যেতে পারে সে সফল হবে নিশ্চিত।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট