ফুলের রাজধানী যশোরের গদখালিতে,বিক্রি না হওয়া ও ক্ষেতে ঝরেপড়া ফুলের পাপড়ি দিয়ে, তৈরি হচ্ছে প্রসাধনী পণ্য
হাফিজুর শেখ যশোর
ফুলের রাজধানী যশোরের গদখালিতে, বিক্রি না হওয়া ও ক্ষেতে ঝরেপড়া ফুলের পাপড়ি দিয়ে, তৈরি হচ্ছে প্রসাধনী পণ্য।তৈরি শুরু করছেন নারী উদ্যোক্তরা। প্রসাধনী,আগরবাতি সাবান সুগন্ধি সামগ্রীসহ নানা ধরনের বাহারি পণ্য তৈরি করে সাড়া ফেলেছেন এ কাজে জড়িত নারী উদ্যোক্তারা। অনলাইন প্লাটফর্ম সহ বিভিন্ন ভাবে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রিও করছেন তারা। প্রশিক্ষণসহ আর্থিক সহায়তা পেলে এ খাতের আরও বিকাশ সম্ভব।কৃষি বিভাগ বলছে, ফুলের বহুবিধ বাণিজ্য সম্প্রসারণে তারা সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।শুধু বসন্তে নয়, সারা বছর ফুল ফোটে ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছার গদখালীতে। কিন্তু
বছরের ছয় মাস, বিশেষ করে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাজারে ফুলের চাহিদা কম থাকে। এ জন্য ফুল চাষিরা অর্থনৈতিকভাবে লোকসানে পড়েন। তবে এখন পরিস্থিতি ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। গদখালীর অদূরে ফুল কানন পানিসারায় বাংলাদেশ-আমেরিকা সৌহার্দ্য ফুল বিপণন কেন্দ্রে চলছে ফুল দিয়ে নানা ধরনের বাহারি পণ্য তৈরির কাজ। পাপড়ি ছাড়িয়ে তা জ্বালিয়ে রঙ বানিয়ে কাপড়ে বুটিকের ছাপে বিভিন্ন রূপায়নের কাজ করছেন নারী উদ্যোক্তারা। তৈরি করা হচ্ছে ফুলের নির্যাস থেকে সুগন্ধি তৈল, গোলাপের শুকনো পাপড়ির গুঁড়ো দিয়ে বানাচ্ছেন আগরবাতি ও সাবান। সেই সঙ্গে ফুলের শুকনা পাপড়ি দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ওয়ালমেট, হাতের চুড়ি,
কানের দুল, চাবির রিং, ফটোফ্রেম এবং কলমও তৈরি করা হয়। নানাভাবে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রিও করছেন তারা।পানিসারা গ্রামের নাসরিন নাহার আশা, রাবেয়া খাতুন এবং হাড়িয়া গ্রামের সাজেদা বেগম। আর তাদের কাছ থেকে হাতেকলমে কাজ শিখে সমৃদ্ধির পথে আছেন অন্য আরও ২৭ নারী। উদ্যোক্তা রাবেয়া খাতুন বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে রিজিওনাল কানেকটিভিটি প্রকল্পের মাধ্যমে সোসাইটি ফর ব্রাইট সোশ্যাল সার্ভিসেসের উদ্যোগে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনিসহ চারজন। এরপর দেশে ফিরে কাজ শুরু করি। প্রথমে বাগান থেকে কয়েকটি গোলাপ এনে পাপড়িগুলো রোদে শুকিয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন ওয়ালম্যাট তৈরি করি। সেটি এক হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। এ ঘটনা এ ধরনের কাজ করার জন্য আরও অনেককে
উৎসাহিত করে। রাবেয়া খাতুন আরও বলেন, আমি এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অন্য দুজন গ্রামের নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দলগতভাবে কিছু করার চেষ্টা করছি। আমরা এরই মধ্যে দৃষ্টিনন্দন ওয়ালম্যাট, চুড়ি, দুল, চাবির রিং, ফটো ফ্রেম, কলম, সাবান, আগরবাতি, মসকিউটো ক্রিম, সুগন্ধি তেল ও গোলাপজল তৈরি করেছি। সাজেদা বেগম বলেন, আমাদের উৎপাদিত পণ্য বিপণনের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফুল ও ফুলের কাজ শিরোনামে একটি পেজও খোলা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে পরিচয় সূত্র ধরে পণ্য বিক্রি করছি। একটি মেলায় স্টল দিয়েছিলাম বেশ সাড়া পেয়েছি।নাসরিন নাহার আশা জানান, এ কাজের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এসব পণ্য তৈরির উদ্যোগ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও প্যাকেজিং করতে হলে অন্তত দুটি যন্ত্র বিদেশ থেকে আনতে হবে। সেই যন্ত্র কেনা ও কারখানা স্থাপনে ৫০ লাখ টাকা দরকার। কিন্তু কারখানা করার মতো পুঁজি তাদের নেই। কারখানা হলে গ্রামের অনেক নারীর বাড়িতে কর্মসংস্থান হবে। এদিকে, এ তিন নারী উদ্যোক্তার কাছ থেকে হাতে-কলমে কাজ শেখা অন্য নারীদের দাবি, সংসারের কাজের পাশাপাশি তারা এ কাজটি করে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। নিজেদের তৈরি সাবান ও প্রসাধনী নিজেরাই ব্যবহার করছেন, আবার বিক্রি করে অর্থও আয় করছেন, যা সংসারে কাজে লাগছে।যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, প্রশিক্ষণসহ আর্থিক সহায়তা পেলে এ খাতের আরও বিকাশ সম্ভব। তিনি বলেন, চাষিদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ফুল খাতকে এ পর্যন্ত এগিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ফুলের বাই প্রোডাক্টের একটা বড় ধরনের বাজার রয়েছে। অর্গানিক এ বাজার ধরতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা খুব জরুরি। এজন্য একটি কেন্দ্রীয় ফুল গবেষণা কেন্দ্র, প্লাস্টিক ফুল আমদানি বন্ধসহ নীতিগত কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। এ কাজে সরকারের এগিয়ে আসা দরকার মনে করি।
গোলাপের পাপড়ি দিয়ে তৈরি বাহারি পণ্য
কৃষি সম্প্রসারণ
অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মনজুরুল হক বলেন।ফুলের বাই প্রোডাক্ট তৈরির বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ফুল চাষিদের সঙ্গে তারা কাজ করছেন। সেটি এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ফুলের বহুবিধ বাণিজ্য সম্প্রসারণে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তারা প্রস্তুত। শিগগিরই নতুন করে আরও কিছু উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া তারা যাতে সহজ শর্তে ঋণ পেতে পারে সে বিষয়েও সহযোগিতা করা হবে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যশোরে কৃষকের উৎপাদিত প্রায় ৫০ কোটি টাকার ফুল অপচয় হয়। এসব ফুল দিয়ে বাই প্রোডাক্ট বা বিকল্প পণ্য তৈরি করতে পারলে ১৫০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট