যশোরের ক্যাফের নামে মিনি রেস্টুরেন্টে খুলে চলছে আলো-আঁধারিতে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে, বেশির ভাগ স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা
🌺 হাই সোফার ব্যবধানে দেখা যায় না কি হচ্ছে
🌺স্বল্প আলোতে প্রেমের নামে অনৈতিক কর্মকাণ্ড
🌺প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে লাগাম টানা সম্ভব
খবর পদ্মা সেতু অনলাইন নিউজ ডেস্ক
চিত্র ১
শহরের গাড়ি খানায় আলাউদ্দিন টাওয়ারের তৃতীয় তলায় ‘ক্যাফে চপস্টিক’ এর ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, মৃদ আলোয় বসে আছে আট জোড়া তরুণ-তরুণী। দুই পাশে সারি সারি হাই সোফায় তারা বসে আছে। ফলে এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে বোঝার উপায় নেই সেখানে কি হচ্ছে। হাই সোফায় বসা তরুণ-তরুণীরা জড়িয়ে ধরে এতোটাই গভীরে ডুবে রয়েছে, কে দেখছে তার দিকে খেয়াল নেই তাদের। শুধু এখানেই শেষ না। একদম পিছনে রয়েছে দুটি কাঠের খুপড়ি ঘর। খুপড়ি ঘরের দরজায় আছে পর্দা। ভিতরে কি হচ্ছে তা বোঝার কোন উপায় নেই। খুপড়ি ঘড় দুটিতেই দুই জোড়া উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী এমনভাবে বসে আছে যেন, এক দেহেতে দুই প্রাণ তাদের।
চিত্র ২
শহরের স্টেডিয়াম রোডে মিনি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ‘ফুড ইউ যশোর’ সামনে দেখা মিলল সাধারণ ক্রেতাদের। এরপর রেস্টুরেন্টের শেষ সীমানায় দেখা গেল ছোট্ট একটি দরজা। বোঝার উপায় নেই ভিতরে কোনো কক্ষ আছে। সেখানে প্রবেশ করতেই দেখা মেলে স্কুল-কলেজের ড্রেস পরা অবস্থায় ওঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরীরা সীমিত আলোয় অন্তরঙ্গ সময় কাটাচ্ছে। এ কক্ষ নির্ধারিত এদের জন্য। রেস্টুরেন্ট মালিক তাদের সুযোগ করে দিয়েছেন আনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য।
চিত্র ৩
শহরের বস্তাপট্ট্রি রোডে দ্বিতীয় তলায় ‘ক্যাফে ইয়াম্মি ডেলাইট’ রেস্টুরেন্টে ঢুকেই মনে হলো কোন কোচিং সেন্টার এটি। প্রায় সকলের শরীরে রয়েছে স্কুল-কলেজের ইউনিফর্ম। সামনে রয়েছে হরেক রকমের খাবার। তবে তারা তা খাচ্ছে না। জোড়ায় জোড়াই বসে যে যার মতো সময় পার করছেন। ক্যাফের উত্তর দিকে রয়েছে প্রায় অন্ধকার কেবিন। ভিতরে জলছে মৃদ নানা রঙের আলো। তাদের অন্তরঙ্গ অবস্থা প্রকাশযোগ্য নয়। একই রোডে অবস্থিত ‘ক্যাফে বৈঠক খানা’। এখানেও একই অবস্থা।
শুধুমাত্র এসব ক্যফে নয়, পুলের হাট রাজগঞ্জ রোডের বাঘেরহাট বাজার রুদ্রপুর কলেজ সংলগ্ন ক্যাফে অস্থির, পলাশি করেজের পাশে গ্রীণ ক্যাফে, পলাশি বাজার মোড়ের বাম্বু ক্যাফেসহ অধিকাংশ মিনি রেস্টুরেন্টে চলে নৈতিক স্খলনের যাত্রাটা। রোববার সারাদিন শহরের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে সরেজমিনে এসব তথ্য পাওয়া যায়। আলো-আঁধারিতেই চলে প্রেমের নামে অনৈতিক কর্মকাণ্ড। ক্যাফের কেবিনগুলো যেন মধুকুঞ্জ। প্রশাসনের কড়া নজরদারি ছাড়া এর লাগামটানা কোনোভাবেই সম্ভব না বলে মনে করছেন সমাজ সচেতনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক তরুণ জানায়, অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর জন্য চাইনিজ রেস্টুরেন্টে আসা। এখানে সব ধরনের ব্যবস্থা করে রাখা আছে।
প্রেমের নামে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা।ছেলে-মেয়েদের সাথে অভিভাবকদের বন্ধুর মতো মিশতে
হবে। যেন সব শেয়ার করতে পারে।
-অধ্যাপক মর্জিনা আক্তার, অধ্যক্ষ, এমএম কলেজ।
বিভিন্ন ক্যাফের আশেপাশের দোকানিরা জানান, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের আনাগোনা বেশী থাকে। এছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে নানা শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষরা এখানে এসে সময় পার করেন। ক্যাফেতে খাবার দাবার অর্ডারের নামে খুপড়ি ঘরে চলে তরুণ-তরুণীর অনৈতিক কর্মকাণ্ড। অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য ক্যাফের খুপড়ি ঘরগুলো তাদের কাছে নিরাপদ স্থান। এ সুযোগে মালিকও আর্থিক সুবিধা পাচ্ছে।
তবে অনেক ক্যাফে মালিক ও ম্যানেজাররা বলেন, তাদের রেস্টুরেন্টে সিসিটি টিভি ক্যামেরার আওতায়। এখানে কোনো অসামাজিক কর্মকাণ্ড হয় না। কেউ কেউ বলেন, কিছু কিছু ক্যাফেতে অধিক মুনাফার জন্য অসামাজিক কাজ করার সুযোগ করে দেয় শুনেছি।
যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারায়ন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, প্রশাসন এই বিষয়ে যতেষ্ট সোচ্চার। তারপরও তারা যদি এসকল ক্যাফে বা রেস্টুরেন্টে মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে, তাহলে ছেলে মেয়েরা বিগড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে। তিনি বলেন, বাচ্চাদেরকে দরজা জানালা বন্ধ করে পড়ালেখা করতে দেওয়া উচিৎ নয়। এতে করে বাবা-মায়ের অজান্তেই অধঃপতনে যাবে তাদেরই আদুরে ছেলে-মেয়েটি।
শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে শ্রেণি শিক্ষকের দায়িত্ব তাদের খোঁজ নেওয়া। আবার স্কুলে এসে সন্তানদের দেখভাল করাও অভিভাবকগণের দায়িত্ব।
শোয়াইব হোসেন, প্রধান শিক্ষক, যশোর জিলা স্কুল।
জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. শোয়াইব হোসেন বলেন, ক্লাস করার নাম করে বাড়ি বেরিয়ে এসে অবাধ প্রেমের অভিসারে মেতেছে ছেলে-মেয়েরা। অভিভাবক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের আরো সতর্ক হতে হবে। ছাত্র-ছাত্রী ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে শ্রেণি শিক্ষকের দায়িত্ব তার খোঁজ-খবর নেওয়া। আবার মাঝে মধ্যে স্কুলে এসে তাদের সন্তানের পড়া লেখার বিষয়ে দেখভাল করাও অভিভাবকগণের দায়িত্ব। শিক্ষকের পাশাপাশি অভিভাবকদেরকে আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
যশোর সরকারি এমএম কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহিন জানান, হঠাৎ করেই আমাদের সমাজ পরিবর্তন হচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে নানা বিষয় আমাদের সমাজে প্রবেশ করেছে। অথচ এটাকে কিভাবে ব্যবহার করতে হবে, তা আমাদের জানা নেই। তিনি বলেন, একটা মূল্যবোধকে ধারণ করতে গেলে সময় লাগবে। ইন্টারনেটকে ‘বদহজম’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব বন্ধ করার জন্য আমাদের রেগুলেটরি এজেন্সি ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে।
প্রশাসনের আরও তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে। ক্যাফে বা রেস্টুরেন্টে অভিযান চালালে ছেলে-মেয়েরা বিপথে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে।বল্ললেন নারায়ন চন্দ্র দেবনাথ, প্রধান শিক্ষক, যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়
যশোর সরকারি এমএম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মর্জিনা আক্তার বলেন, ডিজিটাল সংস্কৃতির গড্ডালিকা প্রবাহে বিদেশি অপসংস্কৃতির আগ্রাসনের পাশাপাশি ব্যপকহারে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ, প্রচলিত প্রেমের নামে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনৈতিক সম্পর্কে জড়াচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা। অভিবাবকদের ছেলে-মেয়েদের সাথে বন্ধুর মতো মিশতে হবে। যাতে করে যাইই করুক না কেনো দিন শেষে তার বাবা মায়ের সাথে শেয়ার করতে পারে
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট