ডেক্স রিপোর্ট :
খেয়াল করলে দেখবেন, রাত জাগলে ক্ষুধা পায় বেশি। এই ক্ষুধা মেটাতে রাতবিরাতে এটা-ওটা খেয়ে ফেলা হয়। আর সাধারণত ঝটপট যে খাবারের আয়োজন রাতে করা হয়, তাতে ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকে। উদাহরণ হিসেবে কাপ নুডলসের কথা বলা যায়, যার পুরোটাই প্রক্রিয়াজাত শর্করা। অর্থাৎ ওজন কমানোর অন্তরায়। রাতে অনলাইনে খাবারের ফরমাশ দেওয়ারও সুযোগ থাকে। এসব নাশতার বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য।
তা ছাড়া রাতে ভালো ঘুম না হওয়ার কারণে দিনের বেলা আপনার শরীর এবং মনে ক্লান্তি ভর করে। ফলে ব্যায়ামের সময় হলেও নিজেকে প্রস্তুত করা কঠিন হয়ে পড়ে। মনে হতে পারে, আজ থাক, আরেক দিন। ঘুম কম হলে ভাবনাগুলো এলোমেলো হয়ে পড়তে পারে, চিন্তার ধোঁয়াশায় হারিয়ে যেতে পারে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের প্রতিজ্ঞাও।
আপনি হয়তো ওজন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন, কিন্তু আপনার অজান্তেই সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে আপনার ঘুম। ঘুমের সঙ্গে ওজনের যে সম্পর্ক, তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এবং ভালো ঘুমের জন্য করণীয় সম্পর্কে জানালেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মতলেবুর রহমান।
ঘুমের সঙ্গে দেহের বিপাকক্রিয়ার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। ভালো ঘুম না হলে বিপাকে বিঘ্ন ঘটে। ফলে ওজন বাড়ে। তা ছাড়া পর্যাপ্ত ঘুম না হলে কর্টিসল হরমোনের রোজকার স্বাভাবিক চক্রে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। ফলে ভরপেট খাওয়ার পরেও আপনি ক্ষুধার্ত বোধ করতে পারেন। তাই দিনের বেলাও খাদ্যাভ্যাসকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে বেশ মুশকিলে পড়তে হয়। ভালো ঘুম না হলে ওজন বাড়তে পারে। বিজ্ঞানের নানা তত্ত্বকথা বিশ্লেষণ করে যা জানা গেল, তার মূল কথা হলো ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে আপনাকে ঠিকঠাক ঘুমাতেই হবে।বুঝতেই পারছেন, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘুমাতে হবে ঠিকঠাক। যেসব বিষয় খেয়াল রাখুন—
রোজ নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যাওয়ার এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস রাখা প্রয়োজন।
প্রাপ্তবয়স্ক একজন ব্যক্তির রোজ ৮ ঘণ্টা ঘুম চাই।
রাতে ঘুমের সমস্যা হলে দুপুরের পর চা-কফি, অ্যালকোহল, এমনকি চকলেট খাওয়া থেকেও বিরত থাকুন।
ক্ষুধার্ত অবস্থায় না ঘুমানোই ভালো। তাহলে ক্ষুধার তাগিদে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যেতে পারে। ঘুমের আগে ভরপেট খেলেও কিন্তু ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই ঘুমের ঘণ্টাখানেক আগে হালকা খাবার খেয়ে নেওয়া ভালো।
ঘুমের অন্তত ৩ ঘণ্টা আগেই শরীরচর্চা সেরে ফেলুন।
ঘুমের ২ ঘণ্টা আগেই মুঠোফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, টেলিভিশন ইত্যাদি বন্ধ করে দিন।
ঘুমের আগের সময়টা কাটান প্রশান্তিতে। কাজের চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন মাথা থেকে। কুসুম গরম পানিতে গোসল করতে পারেন। কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করতে পারেন। বই পড়তে পারেন।
যাঁদের ওজন খুব বেশি থাকে, তাঁদের অনেকেরই ঘুমের সময় শ্বাসপ্রশ্বাস বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে রাতে ঘুমানোর পরেও দিনের বেলা তাঁদের মধ্যে ঘুম ঘুম ভাব হয়। এ ক্ষেত্রে অনেক ঘুমালেও কিন্তু ওই ব্যক্তির ঘুমের গুণগত মান ঠিক না হওয়ার কারণে এই ঘুম তাঁর ওজন নিয়ন্ত্রণে কোনো উপকারে আসে না।
অধিক ওজনের জন্য কোমরব্যথাও হতে পারে। এ থেকে হতে পারে ঘুমের ব্যাঘাত। তাতে ওজন আরও বাড়তে পারে।
হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তি ঠিকভাবে ঘুমাতে পারেন না। আবার তাঁর ওজনও বাড়ে।
থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি হলে একজন ব্যক্তির ঘুম ও ওজন দুটোই বাড়তে পারে। এ হরমোনের আধিক্য থাকলে আবার দুটোই কমে যেতে পারে।
মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে কোনো সমস্যা হয়ে থাকলে ঘুম, খাওয়াদাওয়া এবং ওজন সবই বাড়তে পারে।
এগুলোর কোনোটিই স্বাভাবিক না। কাজেই এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট