_মোঃ সাজ্জাদুর রহমান টিটু
(এস এম মনিরুজ্জামান আকাশঃ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি)
আমি সব বিষয়ে সব সময় সরকারের সিদ্ধান্তের সাথে একমত পোষণ করি। কারণ সরকার যে সিদ্ধান্ত নেয় তা অনেক ভেবে-চিনতে,পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই নেয়। সবার জন্য যেটা মঙ্গল সেটিই সাধারণত সরকার করে থাকেন। কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা বিরোধিতা করে সেসব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন করে। তারা শুধু বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করে। এরা হচ্ছে সেইসব শ্বাশুড়িদের মত যারা বৌমা আগে খেলেও দোষ আবার পরে খেলেও দোষ ধরে বেড়ায়। কেহ মত প্রকাশ করতেই পারে। মত প্রকাশে তার স্বাধীনতা আছে। কিন্তু বিরোধিতা কোনভাবেই কাম্য নয় এবং তা করলে সিদ্ধান্ত বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু ব্যক্তিগত মত আর সরকারের সিদ্ধান্তের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে। ব্যক্তি, ব্যক্তিকেন্দ্রিকভাবে চিন্তা করে আর সরকার সামগ্রিকভাবে চিন্তা করে। সরকারের সিদ্ধান্ত সকলের জন্য সঠিক হবে এমনটাই আবার ভাবা ঠিক হবে না। কিন্তু বাস্তবায়নের পর ৯০-৯৫% মানুষের জন্য সঠিক হলে সেটিই সঠিক বলে ধরে নিতে হবে।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের গুচ্ছে ভর্তি নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক প্রতিবাদ হয়েছে বা হচ্ছে। একদা যারা গুচ্ছের পক্ষে পাহাড়সম যুক্তি দেখায়েছে তারা এখন প্রচন্ডভাবে গুচ্ছের বিরোধিতা করছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবার গুচ্ছে থাকবে না বলে শিক্ষক সমিতি একমত পোষণ করেছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তারপরও সরকারের হস্তক্ষেপে এবারও ইবিকে গুচ্ছের আওতায় থাকতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। তারা স্বাধীনভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে, কোর্স কারিকুলাম প্রণয়ন করবে, ক্লাস পরীক্ষা নিবে এটিই স্বাভাবিক। হুট করে গুচ্ছের নামে কতিপয় বিশ্ববিদ্যালয় বাদ রেখে অন্যান্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে বা করতে হবে সেটি কোন ভাবেই কাম্য নয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি গুচ্ছ অবশ্যই শিক্ষার্থীবান্ধব। কিন্তু এটি বাস্তবায়ন করার আগে এর ভর্তি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি সংস্কার করতে হবে। বর্তমানে যে পদ্ধতিতে গুচ্ছ এগুচ্ছে তাতে শিক্ষার্থীদের শতভাগ সুবিধা দিতে পারছে না। তাছাড়া সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছের আওতায় থাকছে না। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত গুচ্ছ মোটেই শোভনীয় নয়। তাছাড়া গুচ্ছের ভর্তি প্রক্রিয়াও এখনো সঠিক নয় বলে আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি। গুচ্ছ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই এবিষয়ে নজর রাখার অনুরোধ করবো। কারণ এ ক’বছরে গুচ্ছ নিয়ে আমাদের অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। যেখানে একটি সিটের বিপরীতে ৭০/৮০ জন শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতা করছে সেখানে গুচ্ছতে ভর্তির ক্ষেত্রে ইবিসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগে আসন খালি রেখেই ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হচ্ছে। তাছাড়া ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ক্লাস শুরু করার ক্ষেত্রেও অনেক সময় অতিবাহিত হচ্ছে। গত ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার প্রায় পাঁচ মাস পর গত জানুয়ারিতে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন কিছু ফাঁকা রেখেই ক্লাস শুরু করতে হয়েছে। মুলত শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ব্যবস্থার সুবিধা, অর্থ ও সময় নষ্ট না করা, ভ্রমণের ঝুঁকি ঝামেলা লাঘব, অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে এক বিশ্ববিদ্যালয় হতে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোটাছুটির কষ্ট কমাতেই দেশের ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আসছে। শুরু থেকে আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর, সেশনজটের আশঙ্কা, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা বিনষ্ট তথা সার্বজনীনতা হারানোসহ নানা আশঙ্কার কথা বলা হলেও গুচ্ছ থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি কোন বিশ্ববিদ্যালয় বরং এই শিক্ষাবর্ষে নতুন করে আরো দুটো বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ভর্তির ক্ষেত্রে এক বিশ্ববিদ্যালয় হতে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোটাছুটি, বিলম্বে ক্লাস শুরু হওয়ায় ও আসনসংখ্যা পূরণ না হওয়ায় গুচ্ছ নিয়ে নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শুরু থেকে ইতিবাচকতার পাশাপাশি নেতিবাচক মতামত দিয়ে আসছে দেশের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকগণ এও বলেন, ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে পরীক্ষা নেওয়া ভালো। একটি পরীক্ষা দিয়ে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ তৈরি হয়। যার ফলে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ঘুরতে হয় না। এতে যাতায়াত ব্যবস্থার যে দুর্ভোগ সেটি আর থাকে না। আবার যারা দেশের শেষ প্রান্তে বা দুর্গম এলাকায় বসবাস করে তাদের কাছে রাজশাহী, ঢাকা, সিলেটে, চিটাগং, খুলনাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করাও কষ্টসাধ্য। অনেক সময় রাস্তা ঘাটে জ্যামের কারণে পরীক্ষা মিস করতে হয়। কিন্তু পরীক্ষা গুচ্ছতে হওয়ায় নিজ জেলা বা পাশের জেলায় যেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়েছে। তাছাড়া গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে কোচিং, গাইড ব্যবসা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। এক্ষেত্রেও যেমন আর্থিক সাশ্রয় হয়েছে, তেমনি হয়রানীও বন্ধ হয়েছে। অধিকন্তু শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে না। যার ফলে সময় ও অর্থ উভয়ই সাশ্রয় হচ্ছে। গুচ্ছের আওতায় অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় থাকাতে, শিক্ষার্থীদের সিট নিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমেছে। গুচ্ছ পদ্ধতির যেসকল অব্যবস্থাপনা আছে তা দূর করতে পারলে গুচ্ছ একটি শিক্ষার্থীবান্ধব ভর্তি পদ্ধতি হবে সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখবে না। গুচ্ছ ভর্তির অব্যবস্থাপনা গুলো যেমন:
>দ্রুত ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করণ;
> সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছের আওতাভুক্ত করা;
>বিশ্ববিদ্যালয়ে না যেয়ে অনলাইনে বিষয় চয়েজ ও পরিবর্তন, এবং চুড়ান্ত ভর্তির কার্যক্রম সম্পন্নকরণ;
>বিভাগ বা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অটোমেটিক সিস্টেমসহ আরো আধুনিকীকরণ করতে পারলে গুচ্ছ ভালো একটি পদ্ধতি হিসেবে পরিচিতি পাবে বলে আমি মনে করি।
লেখকঃ মোঃ সাজ্জাদুর রহমান টিটু
সহযোগী অধ্যাপক,
আইন বিভাগ,ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,
কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট