যশোরে সহিংসতা বেড়েই চলেছে, বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির ২৮ নেতাকর্মী আটক,পুরো জেলাতে সতর্ক অবস্থানে পুলিশ। যশোরের বিভিন্নস্থানে রাজনেতিক সহিংসতার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। গোটা জেলায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষে হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় পরস্পর বিরোধী অভিযোগ করা হয়েছে।এদিকে নরেন্দ্রপুর আওয়ামী লীগের পক্ষে থানায় মামলা করা হলে পুলিশ বিএনপির ২৮ নেতা কর্মীকে আটক করেছে। এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের গাড়ি ভাংচুর ও বাড়িতে হামলার অভিযোগ করা হয়েছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে যে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা রুখে দেয়ার জন্য অতিরিক্ত ফোর্স মাঠে নামানো হয়েছে।গতকাল দিনভর পুলিশের নানামুখি একশান চোখে পড়েছে। ছত্রভঙ্গ করতে দেখা গেছে কয়েকটি অনাকাঙ্খিত ঘটনার প্রস্তুতি। বিগত কয়েক দিনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কয়েকটি সভা ও মিছিলে দল ও নেতাকর্মীদের নিয়ে পরস্পর বিরোধী উস্কানিমূলক বক্তব্যের ঘটনায় যশোরের বিভিন্ন স্থানে উত্তপ্ত পরিবেশ বিরাজ করে। এক পর্যায়ে অভিযোগ ওঠে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অমিতের বাড়িতে হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। এরপর যশোরের নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় বিএনপির একটি সভা শেষে দলীয় নেতা কর্মীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ যুবলীগ নেতা কর্মীদের উপর হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটায়। ২৭ আগস্ট সকাল ১১ টায় আওয়ামী লীগ যুবলীগ নেতা কর্মীরা রুপদিয়ায় অবস্থিত নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের সেমিনার কক্ষে চেয়ারম্যান রাজু আহম্মেদকে নিয়ে আলোচনা করছিলেন। আগস্ট মাসে বিভিন্ন এলাকায় শোকসভা, দোয়া মাহফিল ও গণভোজের আয়োজন করা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো। একই সময় পাশের ইউনিয়ন কচুয়ায় বিএনপির সমাবেশ চলছিলো। ওই সমাবেশ শেষে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে রূপদিয়া বাজারের দিকে ধেয়ে আসে। পরে আসামিরা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে কয়েকটি ককটেল মেরে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে ও ইউনিয়ন পরিষদ ভাংচুর করে। যাতে ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। পরিষদের গেটের সামনে চেয়ারম্যান রাজুর পাজেরো গাড়ি ও একটি প্রাইভেট এবং একটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। এতে সাড়ে সাত লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এছাড়া রাজুর গাড়িতে থাকা একলাখ ৩৫ হাজার টাকা লুট করে। চেয়ারম্যান রাজুসহ অন্যরা এগিয়ে আসলে আসামিরা রামদা, লোহার রড ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রাজুর সাথে থাকা ১০জনকে মারপিট করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এই অভিযোগে রূপদিয়া এলাকার বিএনপির ৫৪ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়। ওই দিন রাতে মামলাটি করেন নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য যশোর সদর উপজেলার বলরামপুর গ্রামের এসএম আকরাম হোসেনের ছেলে ফারুক হোসেন। মামলার পর ওই দিন গভীর রাত থেকে ২৮ আগস্ট সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিএনপির ২৮ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এজাহারভূক্ত আসামি রয়েছেন ৭ জন ও বাকি ২১ জন তদন্তে প্রাপ্ত আসামি বলে জানিয়েছে কোতোয়ালি পুলিশ।এছাড়াও বাঘারপাড়া থেকে আটক করে কোতোয়ালি থানায় আনা হয়েছে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের সিদ্দিকীকে। তবে তাকে কোন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।এছাড়াও বাঘারপাড়া থেকে আটক করে কোতোয়ালি থানায় আনা হয়েছে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের সিদ্দিকীকে। তবে তাকে কোন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।এদিকে, যশোরে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের বাড়িতে ২৮ আগস্ট বিকেলে ফের হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। বিএনপির অভিযোগ, বিকেল সাড়ে ৪ টায় পুলিশের উপস্থিতিতে এই হামলা হয়। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বাসভবনের চারপাশ থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। হামলা চলাকালে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও তার মা যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম বাড়িতে ছিলেন। এর আগে দড়াটানায় অমিতের ওপর হামলা চালানো হয়। বিকেল চারটায় দড়াটানা ভৈরব চত্বরে পুলিশের উপস্থিতিতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের মাইক্রোবাসটি ভেঙে দেয়। ওইসময় তাদের হাতে হকিস্টিক, ক্রিকেট স্ট্যাম্প, জি আই পাইপ ও রামদা ছিল বলে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন। ভাংচুর করা হয়েছে শহরের লালদীঘির পাড়ে অবস্থিত জেলা বিএনপির কার্যালয়ও।
অপরদিকে, বিকেল ৪ টায় প্রেসক্লাব যশোরে নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন বিএনপি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। কিন্তু পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করতে দেয়নি বলে অভিযোগ বিএনপির। এ সময় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ব্যাপক সংখ্যক নেতাকর্মী প্রেসক্লাবের আশেপাশে অবস্থান নেয় বলেও অভিযোগ বিএনপির।
এ ব্যাপারে নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম বিশ্বাস জানান, তাদের নেতাকর্মীদের উপর হামলা ও আটকের প্রতিবাদে তারা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করতে এসেছিলেন।এ ব্যাপারে যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন জানিয়েছেন, আগস্ট মাস আসলেই বিএনপি নানামুখী নাটক শুরু করে। নিজেরা ঘটনা ঘটিয়ে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করে। হামলা নাশকতা ভাংচুরের রাজনীতি আওয়ামী লীগ করে না। বিএনপি জনবিছিন্ন হয়ে নাশকতা ও হামলার পথ বেছে নিয়েছে। ওই সব ঘটনার সাথে আওয়ামী লীগের কারো সম্পৃক্ততা নেই।জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন জানিয়েছেন, বিএনপির কোথাও সভা সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। একদিকে পুলিশ, অপরদিকে আওয়ামী লীগ হামলা করছে। অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের গাড়ি ও বাড়িতে দুই দফা হামলা হলো। পুলিশ মামলা নিলনা। অথচ রুপদিয়ায় একটি ঘটনা সাজিয়ে বিএনপির অর্ধশত নেতা কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। আটক করা হলো নির্দোষ নেতা কর্মীদের। প্রেসক্লাবেও বিএনপি অবরুদ্ধ হচ্ছে। চরম একটি অস্বস্তিকর রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে যশোরে। দ্রুত এর প্রতিকার না হলে সাধারণ মানুষ রাজপথে নেমে আসবে।এদিকে, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য ফারুক হোসেনের মামলায় আসামি করা হয়েছে, জেলা বিএনপির সদস্য গোলাম রেজা দুলু, চাউলিয়ার সোহেল রানা তোতা, নগর বিএনপি সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁন, জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহম্মেদ, যুগ্ম সম্পাদক নাজমুল হোসেন বাবুল, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমির ফয়সাল, হামিদপুরের শফিকুল ইসলাম, শেখহাটির আব্দুর রাজ্জাক, মুড়লির বিহারী রাজু, চাউলিয়ার আব্দুস সালাম বিশ^াস, রামপুরের শিমুল হোসেন, গোপালপুরের হাসানুর রহমান শাকিল, রেজাউল ইসলাম রেজা, শ্রীপদ্দী গ্রামের আবু সাঈদ, বারীনগরের বুলবুল, দক্ষিণ ললিতাদহের হাফিজুর রহমান, লাউখালীর বাবলু, হাটবিলা জামতলার আফজাল হোসেন, রূপদিয়ার লাইস খান, মানিকদিহির শরীফ হোসেন, ঘোপের রেজাউল ইসলাম মোল্লা, কুয়াদার সিরাজ মোল্লা, মফিজুর রহমান টিটু, রাজারহাটের লিটন হোসেন, মুড়লির মারুফ হোসেন, রাজারহাটের রাজিব হাসান, রামনগরের জহির হাসান, মোজাহার, জাহাঙ্গীর, মনোহরপুরের দাউদ ইব্রাহিম, রামনগরের পারভেজ, ইমামুল, শেখহাটির বেনজির বিশ^াস, মথুরাপুরের পারভেজ, কচুয়ার আসলাম, গাইদগাছীর অহেদ মোড়ল, মনোহরপুরের আকরাম হোসেন, গাইদগাছির মশিয়ার রহমান, নরেন্দ্রপুরের ফারুকুজ্জামান রাসেল, হাটবিলার কামাল শেখ, ঘুরুলিয়ার আনোয়ার হোসেন, গাইদগাছির কাজী রাহী তনা, বলরামপুরের আব্দুল হালিম, গাইদগাছির অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান খান, ঘোপ জেলরোডের সৈয়দ আলী আশফাক, রূপদিয়ার মকবুল হোসেন, নরেন্দ্রপুরের জিলহাজ, গোপালপুরের ইমামুল ইসলাম তুহিন, নরেন্দ্রপুর বেলতলার সামাদ, ধোপাপাড়ার আলম, বানিয়ারগাতির শফিয়ার রহমান সফি, গোপালপুরের কামরুল ও বলরামপুরের জাহাঙ্গীর আলম।
আসামিদের মধ্যে আটক করা হয়েছে জেলরোডের সৈয়দ আলী আশফাক, মনোহরপুরের দাউদ ইব্রাহিম, আকরাম হোসেন, গাইদগাছীর অহেদ মোড়ল, মশিয়ার রহমান, কাজী রাহী তনি, হাটবিলা জামতলার আফজাল হোসেন, লেবুতলার আব্দুল্লাহ আলামিন বাবু, শাহাবুদ্দিন খা, কোদালিয়ার টুকু, বিল্লাল হোসেন, লেবুতলার মামুন হোসেন, ঘুরুলিয়া মধ্যপাড়ার তরিকুল ইসলাম, কিসমত নওয়াপাড়ার রাজু আহম্মেদ, চাঁচড়া ভাতুড়িয়ার আসাদুজ্জামান, হাবিবুর রহমান, আবু সাঈদ বিশ^াস, চাঁনপাড়ার ওয়াদুদ, ওসমানপুরের শিমুল হোসেন, বানিয়ারগাতির আনোয়ার হোসেন, রিয়াদ হোসেন, মুনসেফপুরের আব্দুর রহমান, নরেন্দ্রপুরের মশিয়ার রহমান, ছাতিয়ানতলার মাসুদ, চুড়ামনকাটির দেলোয়ার হোসেন ওরফে শাহ আলম, নিজাম উদ্দিন, কোদালিয়ার রবিউল ইসলাম ও ওয়াসিম মেম্বারকে।রাজনৈতিক সহিংসতার ব্যাপারে যশোর কেতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, সহিংসতা ও অনাকাঙ্খিত ঘটনার ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। গোটা জেলায় অতিরিক্ত ফোর্স নিযুক্ত করা হয়েছে। হামলা নাশকতায় যারাই জড়িত থাকবে আইনের আওতায় আনা হবে। রুপদিয়ার ঘটনায় মামলার পর তদন্ত কর্মকর্তা নাজমুল হাসান গভীর রাতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৮ জনকে আটক করেছেন। ২৮ আগস্ট দুপুরে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করেন
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট