অসুস্থ মাকে গোয়াল ঘরে রাখেন ছেলে, উদ্ধার করলেন ইউএনও।অসুস্থ মাকে গোয়াল ঘরে রাখেন ছেলে, উদ্ধার করলেন ইউএনও।যশোরের চৌগাছায় অসুস্থ অবস্থায় গোয়াল ঘরে ফেলে রাখা এক মাকে উদ্ধার করে ছেলের বাড়িতে তুলে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা। রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের বুড়িন্দিয়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অসুস্থ ওই মা গোয়াল ঘরের ময়লার মধ্যে মেঝেতে একটি কাঁথার ওপর প্রায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন। গোয়াল ঘরে তীব্র গরমের মধ্যে সেখানে নেই কোনো বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা। অথচ পাশেই পাকা একটি রান্নাঘরে বৈদ্যুতিক পাখার নিচে বসে বৃদ্ধার পুত্রবধূ রান্না করছেন। তার পাশেই চার রুমের আলিশান একটি ফ্ল্যাটবাড়ি। যার প্রতিটি রুমের মেঝে, এমনকী ছাদে ওঠার সিঁড়ি পর্যন্ত টাইলস করা। কক্ষগুলো টিভি, ফ্রিজসহ আসবাবপত্র দিয়ে পরিপাটি করে সাজানো। বৃদ্ধার এমন দূরাবস্থার খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন ইউএনও। তিনি ওই বৃদ্ধার পুত্রবধূর কাছে তাকে কেন এই ময়লার মধ্যে গোয়াল ঘরে রাখা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন, উনি কাপড়-চোপড়ে মূত্রত্যাগ করেন বলে লোকজন বলেছে গোয়াল ঘরে রাখতে। আবার বলেন, বৃদ্ধা নিজেই এখানে থাকতে চেয়েছেন।একপর্যায়ে গ্রামের নারী-পুরুষরা ঘটনাস্থলে আসেন। তারা বলেন, বৃদ্ধার ঝগড়াটে পুত্রবধূর ভয়ে তারা কোনো প্রতিবাদ করতে পারেননি। তারা জানান, তিনদিন আগে মেয়ের জামাই বৃদ্ধাকে ছেলের বাড়িতে রেখে যাওয়ার পর থেকেই তাকে গোয়াল ঘরে ফেলে রেখেছেন তারা।এসময় বৃদ্ধা ইউএনওকে জানান, প্রায় তিন-চার বছর ধরে তিনি তার চার মেয়ের বাড়িতে থাকেন। কিছুদিন আগে বরিশালে ছোট মেয়ের বাড়িতে ছিলেন। সেখান থেকে কয়েকদিন আগে আসেন চৌগাছার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামে আরেক মেয়ের বাড়িতে। সেখানে তিনি পড়ে গিয়ে মারাত্মক আহত হন। জামাই খুব দরিদ্র হওয়ায় তাকে চিকিৎসা করাতে পারেননি। সেখান থেকে মেয়ের জামাই তিনদিন আগে তাকে ছেলের বাড়িতে রেখে যান। সেদিন থেকেই ছেলে ও তার পুত্রবধূ বৃদ্ধাকে গোয়াল ঘরে ফেলে রেখেছেন। সেখানে যন্ত্রণায় তিনি ছটফট করছেন। তার দুচোখ জ্বলে যাচ্ছে। রাতে বা দিনে কোনো সময় তাকে একটি ফ্যানও দেওয়া হয়নি।পরে ইউএনও ইরুফা সুলতানা স্থানীয় কয়েকজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে ওই বৃদ্ধাকে ছেলের ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে তুলে দেন। এরপর ছেলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকায় পুত্রবধূর কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়। বৃদ্ধা আমৃত্যু ছেলের ফ্ল্যাটবাড়ির কক্ষে থাকবেন। কাপড়-চোপড় নষ্ট করলে ছেলে ও পুত্রবধূ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে দেবেন এবং সোমবারই বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাবেন। এসময় ওই পুত্রবধূ বলেন, আমাদের তাকে ডাক্তার দেখানোর মতো টাকা নেই। তখন তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। একমাত্র ছেলে। তিনিও নিজের মাকে গোয়াল ঘরে গরুর মলমূত্রের মধ্যে ফেলে রেখেছেন।তিনি বলেন, ওই মাকে ছেলের ঘরে তুলে দেওয়া হয়েছে এবং চিকিৎসক দেখানোর জন্য বলা হয়েছে। এর অন্যথা করার অভিযোগ পাওয়া গেলে ওই ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট