নরসিংদীর আখের বাম্পার ফলন, হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।
নরসিংদীর ৪টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষক। অন্যান্য ফসলের তুলনায় আখ চাষে বেশি লাভ হওয়ায় আখ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকেদের। চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর অধিক লাভের মুখ দেখছে আখ চাষীরা। ফলে কৃষকরা বাড়তি লাভের আশায় ব্যাপকভাবে আখের চাষ করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবছর ১৩৯ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। তারমধ্যে রায়পুরায় ৩১, বেলাব ৩০, পলাশে ৩০, শিবপুরে ২৫, সদরে ১৫ ও মনোহরদীতে ৮ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। এ অঞ্চলের আখ জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ পাশ্ববর্তী জেলাগুলোতে চলে যায় । পোকার আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা।কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, নরসিংদীতে উফশী ও স্থানীয় জাতে আখ চাষ হয়। তারমধ্যে ঈশ্বরদী-১৬, ঈশ্বরদী-২৫, ঈশ্বরদী-২৬, ঈশ্বরদী-২৭, ঈশ্বরদী-২৮, লতারিজবাসি, বিএসআর-১, এবং স্থানীয় টেনাই ও মেশ্রীদানা জাতের আখ বেশি চাষ করা হয়। আখের চারার ফাঁকে ফাঁকে সাথি ফসল হিসেবে চাষীরা লাল শাক, মুলা, সরিষা, মরিচসহ অন্যান্যও ফসল ও চাষ করে থাকে। দুই থেকে তিন মাসে আখের সাথী ফসল উঠলেও আখ পরিপক্ক হতে সময় লাগে আরও কয়েক মাস। এভাবে একসঙ্গে একাধিক ফসল ফলিয়ে সাবলম্বী হচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরা।
জেলায় চাষকৃত আখের ৬০ শতাংশ জেলাবাসীর চাহিদা মেটালেও বাকী ৪০ শতাংশ আখ যায় ঢাকাসহ পাশ্ববর্তী জেলাগুলোর বিভিন্ন বাজারে।
আখ বিক্রির হাট হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে নরসিংদীর শিবপুরের সিএন্ডবি বাজার, মনোহরদীর হাতীরদিয়া বাজার, রায়পুরার পলাশতলী বাজার, পলাশের কালীরহাট, চরসিন্দুর এবং বেলাব উপজেলার বেলাব বাজার ও বারৈচা বাজার। এ বাজারগুলোতে প্রতিদিন আখের পাইকারি হাট বসে। এই হাটগুলোতে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার আখ বিক্রি হয়। প্রতিদিন সকালে ক্রেতা বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে জেলার পাইকারি আখের বাজারগুলো। ভোর থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে আখ চাষীরা তাদের উৎপাদিত আখ বাজারগুলোতে নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। তবে অনেক কৃষকই পাইকারি বিক্রির চেয়ে গ্রাহক পর্যায়ে খুচরা বিক্রিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এতে দুইভাবে লাভবান হয়। একদিকে খুচরা অধিক দাম পায় অন্যদিকে খুচরা বিক্রি করলে আখের ওপরের অংশ তারা রেখে দেয় যা আখ চাষে বীজতলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই আগার প্রতিটি অংশ ৫ টাকা করে কৃষকদের কাছে বিক্রি করা যায়।
জানা গেছে, জেলার শিবপুর উপজেলার দুলালপুর, মাছিমপুর, সাধারচর, চক্রধা, পলাশ উপজেলার জিনারদী, গজারিয়া, চরসিন্দুর, বেলাব উপজেলার, বেলাব, বাজনাব, আমলাব, বিন্নাইবাদ ও রায়পুরা উপজেলার পলাশতলী, আমিরগঞ্জ এবং মরজাল ইউনিয়নে অধিকতর আখ চাষ হয়। এছাড়াও নরসিংদী সদর ও মনোহরদী উপজেলার দুই/একটি ইউনিয়নে অল্পস্বল্প আখ চাষ করা হয়েছে।
আখের ব্যাপারী কাইয়ুম মিয়া আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, প্রতিদিন তিনি পলাশতলী বাজারে আখ কিনতে আসেন। এই হাটে আখ বিক্রি হয় শ’ হিসাবে। আখের প্রকার ও ভালোমন্দ অনুযায়ী প্রতিটির দাম হয় ২০ থেকে ৪০ টাকা। এই হিসাবে প্রতি ১০০ আখ বিক্রি হয় ২ থেকে ৪ হাজার টাকা।
বেলাব বাজারে আখ কিনতে আসা কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর পাইকার আব্দুল হাই আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, অপেক্ষাকৃত ভালো মানের এবং কম দাম হওয়ায় তারা এই হাট থেকেই আখ কেনেন। পরিবহন ভাড়া যোগ করে তারা প্রতিটি আখ আকার ভেদে বিক্রি করেন ৩০ থেকে ৫০ টাকা।রায়পুরা উপজেলার পলাশতলীর খাকচক এলাকার কৃষক চাঁন মিয়া সাথে আলাপকালে তিনি আরটিভি নিউজকে বলেন, তিন বিঘা জমিতে চাষ করে তিনি এ পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ টাকার আখ বিক্রি করেছেন। আরও প্রায় এক লাখ টাকার মত বিক্রি করতে পারবেন। আর এই তিন বিঘা জমিতে তার খরচ হয়েছে ৯০ হাজার টাকার ওপরে।একই উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের বালুয়াকান্দি এলাকার মেহেদী হাসান আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, আখের ফলন উঠার সঙ্গে সঙ্গেই জমিকে পুনরায় আখ চাষের জন্য তৈরি করতে হয়। তিনি এবছর দেড় বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছেন। তিনি তার জমির আখ হাসনাবাদ বাজারে নিয়ে গিয়ে নিজেই খুচরা বিক্রি করে। এতে তিনি অধিক দাম পাচ্ছেন। যে আখ তিনি পাইকারি বিক্রি করলে ৩০ টাকা দাম পেতেন তা তিনি খুচরা অনায়াসে ৫০ টাকা বিক্রি করতে পাচ্ছেন। এছাড়া চারার জন্য নেওয়া প্রতিটি আগা তিনি পাঁচ টাকা করে বিক্রি করছে। আর এর জন্য কৃষকরা তাকে অগ্রিম টাকা দিয়ে যাচ্ছে।একই এলাকার কৃষক মো: রইছ মিয়া আরটিভি নিউজকে বলেন, কিছুদিন আগে তার জমির আখের ফলন উঠেছে। তিনি তার দুটি জমিতে দুইভাবে আখ চাষ করেছেন। একটিতে আখের আগা লাগিয়ে বীজতলা তৈরি করেছেন এবং অপরটিতে গত মৌসুমে কাটা আখের গোড়া থেকেই চারা গজিয়ে বীজতলা তৈরি হয়েছে।শিবপুরের চক্রধা ইউনিয়নের মোহরপাড়া এলাকার কৃষক ফরিদ উদ্দিন আরটিভি নিউজকে বলেন, আখের ফলন তুলতে সময় লেগে যায় প্রায় এক বছর। তবে আখ খেতে থাকতেই সাথি ফসল হিসেবে বেশ কিছু সবজির চাষ করা যায়। আখের জন্য যে সার দেওয়া হয় সেই সারেই সবজি চাষ হয় যায়।
নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রশিদ আরটিভি নিউজকে বলেন, এ বছর আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকেরা অনেক খুশি। ফলে আখ চাষে আগ্রহী হচ্ছে জেলার কৃষকরা। জেলার মূলত ৪টি উপজেলা ব্যাপকভাবে আখ হয়।মাহবুবুর রশিদ আরও বলেন, এক সময় ব্যাপকভাবে আখ চাষ হতো। চিনিকলগুলোতে আখ মাড়াই বন্ধ হয়ে গেলে আখের চাহিদা কমে যায়। তাছাড়া যারা গুড় তৈরি করতো তাদের অনেকেই এ কাজ ছেড়ে দেওয়ায় আখ চাষে ভাটা পড়ে। তবে চিবিয়ে খাওয়ার আখের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং অন্য ফসলের চেয়ে আখ চাষে অধিক লাভ হওয়া বর্তমানে জেলার কৃষকরা আখ চাষে ঝুঁকছে। উপজেলা কৃষি অফিসগুলো জেলার আখ চাষীদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট