”
(✏️এস এম মনিরুজ্জামান আকাশ)
নূর জাহান!
কিংবদন্তি নায়িকা ও কণ্ঠশিল্পী হিসেবে আমরা যাকে চিনি ও জানি। হ্যা কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী নূর জাহানের কথাই বলছি। ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম খ্যাতিমান শিল্পী,সুরকার,
অভিনেত্রী এবং চলচ্চিত্র পরিচালকনতিনি। নূর জাহানের কন্ঠে গান শোনেননি এমন মানুষ এই উপমহাদেশে কমই আছে। নূর জাহানের কন্ঠের যাদুর জন্য তাকে সম্মানিত খেতাব মালিকা-ই-তারান্নুম উপাধি প্রদান করা হয়। এ নামে পরিচিত সুরের রানী হিসেবে তিনি ছিলেন পাকিস্তানের গায়িকা-নায়িকা এবং অভিনেত্রী।
নূর জাহান জীবনের প্রাথমিকভাবে ব্রিটিশ ভারতের হয়ে অভিনয় জীবন এবং খ্যাতনামা কণ্ঠশিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হওয়ার পরবর্তী কালে পাকিস্তানের হয়ে একজন নিবেদিত প্রাণ কণ্ঠশিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি।
নায়িকা হিসেবে বলিউড চলচ্চিত্র জগতে নূর জাহান যেসব সিনেমায় অভিনয় করেন,তার অভিনীত উল্লেখ্যযোগ্য সিনেমা গুলো হলো ১৯৩৫ শীলা,বাকাওলি,পিয়াম-ই-হক,
চৌধুরী,সজনি,যমলা,ঈমানদার,রেড সিগনাল,উমরিদ,
গুল,সাসরাল,জাত ইত্যাদি।
এছাড়া নূর জাহানের ধীরাজ, চন্দনি,ফরিয়াদ খান্দান – ১৯৪২ সালের সর্বোচ্চ ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র।
নাদান,দুহাই, নকার ১৯৪৩ সালে সর্বোচ্চ ব্যাবসা সফল ভারতীয় চলচ্চিত্র লাল হাবেলী,১৯৪৪ সালে দোস্ত,
উল্লেখ যোগ্য চলচ্চিত্রে তিনিই ছিলেন হিরোইন।
কণ্ঠশিল্পী নূর জাহান সুদীর্ঘ ৬ দশকের অধিক সময় ধরে তার কর্মজীবনের পার করেন। তিনি বিশেষ করে ভারত উপমহাদেশের তথা দক্ষিন এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বড় সঙ্গীত শিল্পী হিসাবে বিখ্যাত ছিলেন।
যার ফলশ্রুতিতে স্বীকৃতি স্বরুপ তিনি পাকিস্তানের অন্যতম সম্মানসূচক মালিকা-ই-তারান্নুম বা সুরের রানী খেতাব অর্জন করেছিলেন। তিনি হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের পাশাপাশি সংগীতের অন্যান্য ধারার প্রতিও দূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছিলেন।
কণ্ঠশিল্পী নূর জাহান ভারতীয় সঙ্গীত অনুরাগী একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং পিতা মাতার বাদ্যযন্ত্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি শৈশবকাল থেকেই একজন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করার বাসনা লালন করেছেন এবং পরবর্তীতে তা পূরনও করেছেন।
যদিও নূরজাহান বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করে অতি সহসাই দর্শক প্রিয়তা পেয়ে বলিউড চলচ্চিত্র জগতে সাড়া ফেলেছিলেন। কিন্তু গান যেহেতু তার হৃদয় তন্ত্রীতে অবিচ্ছেদ্য ভাবে গাঁথা তাই পরবর্তী সময়ে অভিনয় ছেড়ে গানকেই কন্ঠে তুলে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সুরের মূর্ছনায় জড়িয়ে ছিলেন।
নূর জাহান ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন ভাষায় প্রায় ১৮ হাজার এর অধিক গান রেকর্ড করেছেন, যার মধ্যে যেমন রয়েছে, ঊর্দু,পাঞ্জাবী,পশতুন,সিন্ধী এবং ফার্সি ভাষার গান। সঙ্গীত শিল্পী আহমেদ রুশদির সাথে দ্বৈত কণ্ঠ দিয়ে তিনি পাকিস্তানি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যক চলচ্চিত্রের গানের কণ্ঠস্বর রেকর্ড করার কীর্তি ইতিহাস গড়েন।
জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গানের ভুবনে সুরের ইন্দ্রধনু তুলে ধরার জন্য নূর জাহানকে সর্বকালের সেরা একজন সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে ধরা হয়।
নূর জাহান একজন মহিলা পরিচালক হিসেবে পাকিস্তানের প্রথম চলচ্চিত্র পরিচালনা করার গৌরব অর্জন করেন। এজন্য তাকে প্রথম মহিলা চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান নূর জাহানকে অভিনয় এবং সঙ্গীতে অসাধারণ অবদানের জন্য স্বীকৃতিস্বরুপ পাকিস্তানের অন্যতম সম্মানীয় পুরস্কার “প্রাইড অব পারফরমেন্স” প্রদান করেন।
বিশেষ করে নূর জাহান ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়কার সবচে বেশী দেশাত্মবোধক গান গাওয়ার জন্য।
এছাড়াও তিনি পাকিস্তানি সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরষ্কার তামা-ই-ইমতিয়াজ এবং সিতারা-ই-ইমতিয়াজ পুরষ্কার জিতে নেন।
নূর জাহান পাকিস্তানে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেছেন একে একে ২ বার। এরমধ্যে ১৯৮৭ সালে একবার এবং ২০০২ সালে মৃত্যু পরবর্তী সময়ে আরো একবার পান।
নূর জাহান ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের কাসুরের একটি পাঞ্জাবী মুসলিম পরিবারে ২১ শে সেপ্টেম্বর ১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইমদাদ আলী এবং ফতেহ বিবি দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। এগারো ভাই বোনের মধ্যে নূরজাহান অন্যতম একজন হিসেবে শিল্পী হিসেবে পৃথিবীতে পরিচিতি লাভ করেন।
নূর জাহান ১৯৪২ সালে শওকত হোসেন রিজভীকে বিয়ে করেন। এরপর ১৯৫৩ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এই দম্পতির ঘরে তিন সন্তানের জন্ম হয়,যেখানে জিল-ই-হুমা নামে একজন কন্যা সন্তান সঙ্গীতশিল্পী হন।
এছাড়া ১৯৫৯ সালে শিল্পী নূর জাহান পুনরায় এজাজ দারানিকে বিবাহ করেন। এই দম্পতির ঘরেও তিন সন্তানের জন্ম হয় কিন্তু পরিশেষে আগের মতই ১৯৭০ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
২৩শে ডিসেম্বর ২০০০ইং কণ্ঠ শিল্পী নূর জাহান মৃত্যু বরণ করেন। তার চব্বিশতম মৃত্যু বার্ষিকীতে তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি ও বিদেহী আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
🎤✒️এস এম মনিরুজ্জামান আকাশ
কবি-কলামিস্ট, সাংবাদিক-গবেষক,
পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মী,
সভাপতি-
গ্রিনপিস বাংলা, পাবনা জেলা শাখা,পাবনা।
kdaakash2024pabna@gmail.com
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট