মোঃ মকবুল হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার :
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের পর দলটি আশাবাদ ব্যক্ত করেছে যে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকের পর জানান, প্রধান উপদেষ্টা তাদের আশ্বস্ত করেছেন যে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি রয়েছে। তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব তার ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, “বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চেয়েছে, কিন্তু ঐকমত্য কমিশনের কাজ হবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তাদের আলোচনায় মনে হয়েছে যে সরকার নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দাবিকে আমলে নিয়েছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেটি এখন সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে।
সরকারের প্রস্তুতি ও নির্বাচন কমিশনের অবস্থান
সরকারের এক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে ও পরে কী ধরনের সংস্কার প্রয়োজন, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গঠনের চেষ্টা চলছে। এদিকে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন যে নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং বর্তমানে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, চলতি বছরের শেষ অথবা আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচন হতে পারে।
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক ও রাজনৈতিক অবস্থান
পনেরই ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। বিএনপি দাবি করছে, এই বৈঠক নির্বাচন নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অন্যদিকে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না মনে করেন, সরকারের প্রথম কাজ হওয়া উচিত একটি গ্রহণযোগ্য ভোটার তালিকা তৈরি করা এবং নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও নির্বাচন কমিশনের সংস্কার সম্পন্ন করা।
তিনি বলেন, “বিএনপি ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়, কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন, সব দলের সম্মতি থাকলে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পুলিশ, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের সংস্কার জরুরি হতে পারে।”
জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান
বিএনপি ও সমমনা দলগুলো দ্রুত নির্বাচন চাইলেও জামায়াতে ইসলামী এখনো সংস্কারকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। যদিও তারা সরাসরি ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।
গত জানুয়ারিতে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে বৈঠকের পর জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছিলেন, “বিএনপি তাদের অবস্থান জানিয়েছে, কিন্তু আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো— আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার, তারপর নির্বাচন।”
ছাত্র উপদেষ্টাদের অনুপস্থিতি ও রাজনৈতিক গুঞ্জন
বিএনপি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে ছাত্র উপদেষ্টাদের কাউকে দেখা যায়নি, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনা সৃষ্টি করেছে। বৈঠকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বিএনপি প্রতিনিধি দল একটি চিঠি হস্তান্তর করেছে, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, “কিছু উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন, যা প্রশাসন ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।”
উল্লেখ্য, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা করছে, যেখানে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ যুক্ত হতে পারেন বলে খবর এসেছে। তবে তারা জানিয়েছেন, দল গঠনের ক্ষেত্রে তারা উপদেষ্টা পদ ছাড়বেন।
নির্বাচন ঘিরে পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
বিএনপির দাবি অনুযায়ী, সরকার দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার ওপর।
সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “সরকার রোডম্যাপ প্রকাশ করলে বোঝা যাবে, সংস্কার ও নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের পরিকল্পনা কী।”
সরকারের এক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আসন্ন বৈঠকে নির্বাচনের আগে ও পরে কী ধরনের সংস্কার হবে, সে বিষয়ে ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা করা হবে।
অর্থাৎ, ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনে সরকার ইঙ্গিত দিলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে— ঐকমত্য কত দ্রুত গড়ে ওঠে এবং সরকার কীভাবে এই নির্বাচনের রোডম্যাপ নির্ধারণ করে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট