মোঃ মকবুল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি :
৮ই মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই দিনে নারীদের অর্জন, সম্ভাবনা এবং ক্ষমতায়নের কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবতা কি তেমন? আমাদের দেশে নারীরা আজও অনিরাপত্তার মধ্যে রয়েছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত কেউ রেহাই পাচ্ছে না যৌন সহিংসতা থেকে। প্রতিদিনই খবরের শিরোনামে থাকে ধর্ষণ, নির্যাতন, শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের ঘটনা। তাহলে এই নারী দিবস নারীদের জন্য কতটা অর্থবহ?
বর্তমানে নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত উঠে আসছে ধর্ষণ, পারিবারিক সহিংসতা ও কর্মক্ষেত্রে হয়রানির ঘটনা। এমনকি রাস্তা-ঘাটেও নারীদের স্বাধীনভাবে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এই সম্পর্কে লামিসা তাসনীম জুহা নামের এক শিক্ষার্থীর বক্তব্য হলো,”আসসালামুয়ালাইকুম,
নারী দিবস এর শুভেচ্ছা সেই সকল অনিরাপদ নারীদের, পুরো পৃথিবীর খবর জানিনা আমার প্রিয় বাংলাদেশের খবর জানি । কিছু ক্ষণ পূর্বেই ধর্ষনের খবর পড়ছিলাম অজান্তেই চোখে জল নিয়ে মনে হলো আজ তো নারী দিবস। আচ্ছা ধর্ষন এ শিকার হওয়া বাচ্চা , তরুণী বা এক কথায় নারীরা কী এই নারী দিবস এর শুভেচ্ছার প্রাপ্যতা রাখে?, শাসন ব্যবস্থার দোষ দিতে দিতে হয়রান অমরা । আচ্ছা, আমাদের বাসার পুরুষটাও কোনো ধর্ষক নয়তো! সেই খেয়াল কী রাখি আমরা? নাহ ,কেউই রাখি নাহ । দুঃখ জনক বিষয় হলো আমরা ধর্ষণে শিকার হওয়া মেয়েটার দোষ খুঁজে বেড়াই, দোষী কে যোগ্য শাস্তি দেয়া বাদ দিয়ে। আমার কাছে লাগে যেই জায়গায় নারী নেই সুরক্ষার গন্ডির আসে পাশে সেই দেশে নারী দিবস পালন করা বিলাসিতা। নারী চায় সম্মান নারী চায় নিরাপত্তা কোনো নারী চায় নাহ পূরুষকে টক্কর দিয়ে ধূমপান করতে , রাতের বেলা একা শহর ভ্রমণ করতে । নারী শুধু চায় “নারী” হয়ে বাঁচতে। রাস্তায় বের হলে যাতে তার ভয় নাহ লাগে , যানবাহন ব্যবহার এ যেনো অসস্তি নাহ লাগে, কর্মস্থলে যেনো বৈষম্মতার শিকার নাহ হওয়া লাগে, পরিবার এর অসম্মানের পাত্র যেনো নাহ হয়, পরিশেষ এ যাতে তাকে ধর্ষনের মতো জঘন্য কাজের শিকার নাহ হওয়া লাগে । নারী দিবসের শূন্য তাৎপর্যতা নিয়ে আবার ও সকলকে নারী দিবস এর শুভেচ্ছা। পরিশেষ এ বলবো “নারী ” ট্যাগ যদি বাদও দেই নিজের মা বোন ভেবে হলেও অন্যায় কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন ।
সানজিদা নামের এক শিক্ষার্থীর বলেন, আজ ৮ই মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস—নারীদের অবদানের স্বীকৃতির দিন।নারীরা শুধু মা বা বোন নয়, তারা কর্মী, নেতা, পথপ্রদর্শক। তবুও সমাজের অনেক ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার হন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ নানা চ্যালেঞ্জ থাকলেও নারীরা থেমে নেই।বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সাহিত্য, রাজনীতি—সবক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। সমাজের উন্নয়ন, শান্তি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে তাদের ভূমিকা অপরিসীম। নারী জাগরণ মানেই জাতির অগ্রগতি।
মুহাইমিনুল নামের এক ছাত্র তার বক্তব্যে বলে৷,”আন্তর্জাতিক নারী দিবস একটি বিশেষ দিন, যা নারীদের অবদান এবং তাদের অধিকার নিয়ে আমাদের সচেতন করে তোলে। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, নারীরা পরিবার, সমাজ এবং জাতির অগ্রগতিতে অবদান রাখছে, এবং তাদের সম্মান, অধিকার ও সমান সুযোগ প্রাপ্য। আজকের দিনে, আমরা নারী-পুরুষ সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সমাজে নারীদের আরও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিজ্ঞা করি। নারী দিবস আমাদের সকলকে আরো সাহসী ও সহযোগিতামূলক হতে উদ্বুদ্ধ করে।”
নারী দিবসে অনেক আলোচনা, সভা-সমাবেশ হয়। কিন্তু সেগুলো কি কেবল আনুষ্ঠানিকতাই থেকে যাচ্ছে? নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য ব্যর্থই থেকে যাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি। পরিবার থেকেই ছেলেদের নারীদের সম্মান করতে শেখাতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে, যাতে অপরাধীরা শাস্তি থেকে বাঁচতে না পারে।
নারী দিবস শুধুমাত্র ফুলের তোড়া বা শুভেচ্ছা জানানোর জন্য নয়, এটি নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার দিন। শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবিক পরিবর্তন দরকার। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে যাবে। নারী দিবসের প্রকৃত উদ্দেশ্য তখনই পূরণ হবে, যখন প্রতিটি নারী নিরাপদ ও সম্মানজনক জীবন যাপন করতে পারবে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট