মোঃ মকবুল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি:
সংস্কার ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রচেষ্টায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জাপানের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে—টোকিওতে দ্বিপক্ষীয় এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তা পুনর্ব্যক্ত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। মানব জমিনে প্রকাশিত খবরে এমনটি জানা গেছে।
জাপানের স্থানীয় সময় শুক্রবার আয়োজিত এ বৈঠকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্রগঠন ও সংস্কার কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইশিবা বলেন, তার দেশ শান্তিপূর্ণ উত্তরণে ইউনূস সরকারের প্রচেষ্টার প্রতি সম্পূর্ণ আস্থাশীল। বৈঠক-পরবর্তী যৌথ বিবৃতিতে উল্লিখিত হয়—বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি জাপানের অব্যাহত সমর্থন অব্যাহত থাকবে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ড. ইউনূস জাপানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো প্রকল্পসহ “বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-বি)” ইনিশিয়েটিভে জাপানের সহযোগিতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করছে। স্বাধীনতার পর থেকে দুই দেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তিতে উভয় পক্ষ কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও সুদৃঢ় করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।
‘ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক’ ধারণার প্রতি সমর্থন জানিয়ে উভয় দেশ শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির অভিন্ন লক্ষ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে। জাতিসংঘ সনদের মূলনীতির আলোকে বৈঠকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি, নিরাপত্তা এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদারের অঙ্গীকার করা হয়।
অর্থনৈতিক খাতে সহযোগিতার অংশ হিসেবে, বৈঠকে দুটি ঋণচুক্তি এবং জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে ডুয়েল গেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ‘এক্সচেঞ্জ অব নোটস’ সই হয়। এছাড়া ওয়ান স্টপ সার্ভিস, প্রিপেইড গ্যাস মিটার, ব্যাটারিচালিত সাইকেল তৈরির কারখানা, তথ্য নিরাপত্তা পাইলট প্রকল্প এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে একাধিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
নিরাপত্তা সহযোগিতার অংশ হিসেবে, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য পাঁচটি পেট্রল বোট সরবরাহ এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের বিষয়ে নীতিগত সম্মতি প্রকাশ করে জাপান। পাশাপাশি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন দুই নেতা।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও বৈঠকে বিশেষ আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী ইশিবা রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর প্রতি বাংলাদেশের মানবিক সহায়তার প্রশংসা করেন এবং বিশেষ করে ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের জন্য জাপানের সহায়তার কথা উল্লেখ করেন ড. ইউনূস। উভয় দেশ সম্মত হয় যে, রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছাসম্বত, নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবাসনের মাধ্যমেই এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধান সম্ভব, যার জন্য আন্তরিক সংলাপ অপরিহার্য।
বৈঠকের শেষ পর্যায়ে অধ্যাপক ইউনূস জাপান সরকারের উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী ইশিবাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
অপরদিকে, জাপান সফরের সময় টোকিওর সোকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সামাজিক উদ্ভাবন ও বৈশ্বিক উন্নয়নে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
শুক্রবার আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট সুজুকি ইউনূসের হাতে এই ডিগ্রি তুলে দেন। অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস এক অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতায় সামাজিক পরিবর্তন, উদ্যোক্তা চেতনা এবং বৈশ্বিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজের ভূমিকাকে বিশেষভাবে তুলে ধরেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মে শুরু হওয়া ড. ইউনূসের চারদিনের সরকারি সফর শেষে আজ (৩১ মে) রাতে তিনি সিঙ্গাপুর হয়ে বাংলাদেশে ফিরছেন।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট