পৌনে ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প শেষ হলেও, দখল-দূষণে ধুঁকছে যশোরের প্রাণ ভৈরব নদীর গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে অবৈধ স্যুয়ারেজ লাইন ও ড্রেনের সংযোগ পৌনে তিনশো কোটি টাকার প্রকল্প শেষ হলেও দখল-দূষণে ধুঁকছে যশোরের প্রাণ ভৈরব নদ। অপসারণ হয়নি নদের গলা চেপে ধরা অপরিকল্পিত ব্রিজ-কালভার্ট। সর্বশেষ নদের গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে অবৈধ স্যুয়ারেজ লাইন ও ড্রেনের সংযোগ। শতাধিক প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য এই সংযোগ দিয়ে নদের পানিতে পতিত হচ্ছে।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৬ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’ গ্রহণ করে। প্রকল্প অনুযায়ী, ৯২ কিলোমিটার নদ খননের জন্য ব্যয় ধরা হয় ২৭২ কোটি।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নদ খননের কাজ শেষ হয়ে গেলেও প্রত্যাশিত সুফল এখনো মেলেনি। নদের শহরের অংশে জোয়ার-ভাটা আসার কথা বলা হলেও তার দেখা মেলেনি। এছাড়া নদ খননের ক্ষেত্রে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের বিষয়টি নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ করেছেন অনেকেই।অভিযোগকারীদের মতে, শহরের অংশে ভৈরব নদের জমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা ২৯৬টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে পাউবো। ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি তাদের উচ্ছেদে চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশ পাওয়ার পর বেশকিছু অবৈধ স্থাপনার মালিক নিজেদের বৈধ দাবি করে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন। পরে তারা উচ্ছেদ বন্ধে উচ্চ আদালতেরও শরণাপন্ন হন। এসময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকেও বদলি করে দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ ৮৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। বাকি দুই শতাধিক অবৈধ দখলদারের হদিস নেই।এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম দাবি করেন, ২৯৬টি অবৈধ প্রতিষ্ঠানের তালিকা বিষয়টি তিনি জানেন না। সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখনো দু-একটি অবৈধ দখলদার আছে। তাদেরও দ্রুত উচ্ছেদ করা হবে।এদিকে, ভৈবর নদের গলা চেপে ধরা অপরিকল্পিত ৫১টি ব্রিজ-কালভার্ট এখনো অপসারণ করা হয়নি। পাউবোর তালিকা অনুযায়ী, অপরিকল্পিত ব্রিজ-কালভার্টের তালিকায় যশোর সদরে ৩৪টি, চৌগাছা উপজেলায় ১৬টি এবং ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় একটি রয়েছে। এসব ব্রিজ-কালভার্টের দৈর্ঘ্য মাত্র ১২ থেকে ৭০ মিটার পর্যন্ত। অথচ বর্তমানে ম্যাপ অনুযায়ী নদের প্রস্থ শহরে ১৫০ মিটার এবং শহরের বাইরে ৩০০ মিটার।এছাড়া সর্বশেষ নদের গলার কাঁটায় পরিণত হওয়া ১১৬টি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে পাউবো। দূষণকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, পৌরসভার ড্রেন, ব্যক্তি মালিকানার বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও খামার। দূষণকারী ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে নোটিশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এছাড়া নদের একাধিক স্থানে ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলনেরও অভিযোগ রয়েছে।এ প্রসঙ্গে প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, নদ দূষণকারীদের তালিকা করে তাদের ড্রেন ও অবৈধ স্যুয়ারেজ লাইন নদী থেকে সরিয়ে নিতে নোটিশ করা হয়েছিল। এখন আবার নতুন করে পরিদর্শন করে যারা নির্দেশ অমান্য করেছেন তাদের তালিকা করা হচ্ছে। এই তালিকা অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।আর শহরের বাবলাতলা এলাকা থেকে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, মেশিন দিয়ে ওই এলাকায় খনন পুরোপুরি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এখানে ড্রেজার দিয়ে খনন করা হচ্ছে। এছাড়া অন্য কোথায় ড্রেজার স্থাপন করা হয়েছে কী না তা খতিয়ে দেখবেন বলেও জানান এই প্রকৌশলী।যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ভৈরব নদের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। দু-একটি বাকি আছে; সেগুলোও দ্রুত উচ্ছেদ করা হবে। আর নদের দূষণকারীদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি অপরিকল্পিত ব্রিজ-কালভার্ট অপসারণে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট