মোঃ মকবুল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি:
অর্থনৈতিক সংকটে পড়া পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংককে একীভূত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আগামী জুলাই মাসে একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় কাজ করতে পাঁচটি পৃথক টিম গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে এবং এই প্রক্রিয়া আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যে এগোচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন যে, বিষয়টি নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাঁর ভাষায়, “আমরা শুনেছি, বৈঠকের অন্যতম এজেন্ডা ছিল ব্যাংক একীভূতকরণ।”
গতকাল রাজধানীর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন পাঁচটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যানরা। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো হলো—সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, একীভূতকরণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রতিটি ব্যাংক থেকে দক্ষ জনবল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত পাঁচটি যৌথ দল গঠন করা হবে। প্রায় সাড়ে তিন মাসব্যাপী চলবে এই প্রক্রিয়া। এ সময়কালে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো সাময়িকভাবে সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলোর বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সরিয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি নতুন করে বোর্ড গঠন করা হবে, যেখানে থাকবেন অভিজ্ঞ পেশাদার, ব্যাংকিং খাতের বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট খাতের প্রতিনিধিরা। একীভূত ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে।
এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে সদ্য প্রণীত ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫’। এই আইন বাংলাদেশ ব্যাংককে আর্থিক সংকটে পড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন ও সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিস্তৃত ক্ষমতা দিয়েছে। বর্তমানে এই আইনের আওতায় ছয়টি ব্যাংক পর্যবেক্ষণে থাকলেও, বিদেশি মালিকানার কারণে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংককে এই প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, “নতুন অধ্যাদেশ অনুসারে চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যেই এই পাঁচটি ব্যাংক একীভূত হতে পারে। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর অধ্যাদেশটির মূল কাঠামো ও সম্ভাব্য রোডম্যাপ উপস্থাপন করেছেন।” তিনি আরও বলেন, “যদি কোনো ব্যাংক প্রমাণ করতে পারে যে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে, তাহলে তাদের জন্য ছাড়ের বিষয়টি বিবেচনায় আসতে পারে। অন্যথায় রেজল্যুশন প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক হবে।”
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, “বৈঠকটি ছিল একটি প্রাথমিক ধাপ। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের পরিকল্পনার রূপরেখা আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছে। এখন বিষয়টি আরও বিস্তারিতভাবে মূল্যায়নের পর্যায়ে রয়েছে।”
বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে চলমান অব্যবস্থাপনা, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বিতরণ, মূলধনের ঘাটতি এবং স্বচ্ছতার অভাবে সংকটে পড়া ইসলামি ব্যাংকিং খাতের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। একইসঙ্গে, একীভূত ব্যাংকটির মাধ্যমে একটি শক্তিশালী শরিয়াহভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি হবে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট