মোঃ মকবুল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি:
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এপ্রিল মাস জাতীয় নির্বাচনের জন্য যথোপযুক্ত সময় নয়। এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্ধারিত সময়সূচি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা এখনো এপ্রিলের প্রথম দিকে নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত কোনো দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। তবে আমরা আশা করছি, সরকার বিষয়টি বাস্তবতার আলোকে পুনর্বিবেচনা করবে।”
তিনি জানান, সরকার যে সময় নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে, তা রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। রমজান মাস শেষ হওয়ার পরপরই ঈদ উদযাপন হবে এবং এরপর নির্বাচনের জন্য কয়েক দিন সময় পাওয়া যাবে—এ ধরনের পরিস্থিতিতে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন আয়োজন কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, “রমজানজুড়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে গেলে নানা সমস্যার মুখে পড়বে। প্রচণ্ড গরম, সম্ভাব্য বৃষ্টি বা ঝড় এবং রোজার কারণে প্রচারণা পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে উঠবে।” তিনি আরও বলেন, “ইফতার পার্টি আয়োজনসহ অন্যান্য খরচ দ্বিগুণ হয়ে যাবে, যা নির্বাচনী ব্যয়ের চাপ বাড়াবে।”
তিনি জানান, রমজানে সমাবেশ আয়োজন করাও কঠিন হবে, কারণ দুপুরের প্রচণ্ড গরমে সাধারণ মানুষ মাঠে জড়ো হতে চায় না। এ কারণে অনেক কার্যক্রম রাতে নিতে হতে পারে, যা নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় জটিলতা তৈরি করতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব স্মরণ করিয়ে দেন, অতীত অভিজ্ঞতাও বলে দেয় যে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিই বাংলাদেশের জন্য নির্বাচনের উপযুক্ত সময়। “দুইটি ব্যতিক্রম ছাড়া এ দেশের প্রায় সব জাতীয় নির্বাচন এই শীতকালীন সময়েই অনুষ্ঠিত হয়েছে,”—বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল জানান, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল এবং যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। “আমরা বিপ্লবী দল নই। আমরা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যেতে চাই,”—এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি দলের অবস্থান পরিষ্কার করেন।
বিএনপির সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রচলিত গুজব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সংস্কার না করার যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা পুরোপুরি মিথ্যা। বিএনপি-ই প্রথম দল হিসেবে ভিশন-২০৩০ তুলে ধরেছে এবং গণ-আন্দোলনের আগেই ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি প্রস্তাব করেছে।”
সাংবাদিকদের মাধ্যমে ফখরুল রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান—জাতিকে বিভক্ত না করে সবাই যেন একসঙ্গে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে।
“আজ দেশ একটি বিষয়ে একমত: আমরা গণতন্ত্র চাই, জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পেতে চাই, এবং একটি সংস্কারমূলক রাজনৈতিক কাঠামো দেখতে চাই। অযথা বিভক্তি সৃষ্টি করে দেশের স্বার্থে আঘাত করবেন না,”—বলেন তিনি।
তিনি সতর্ক করেন, “যেকোনো ধরনের ভেতরগত বিভেদ বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের সুযোগ করে দিতে পারে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।”
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট