মোঃ তপু শেখ
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
টুঙ্গিপাড়ায় পরিবেশ বান্ধব ইউনিব্লকের দৃষ্টিনন্দন সড়ক
টুঙ্গিপাড়া গোপালগঞ্জ ৬ অক্টোবর, ২০২২ নিখাদ বার্তাকক্ষ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ইটের পরিবর্তে পরিবেশ বান্ধব ইউনিব্লক দিয়ে তৈরি হয়েছে সাড়ে চার কিলোমিটার দৃষ্টি নন্দন সড়ক।
টেকসই এই সড়ক জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের তারাইল থেকে টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত এই সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এই ইউনিব্লকের সড়ক একদিকে যেমন প্রত্যন্ত এলাকায় সৌন্দর্য বাড়িয়েছে, তেমনি ভোগান্তি কমিয়েছে ১০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের। সড়কের দুই পাশে পাহাড়ি নিম, আকাশমনি ও কৃষ্ণচূড়া গাছ শোভা বর্ধণ করেছে। দিচ্ছে ছায়া ।মনোরম পরিবেশের এই সড়ক সংলগ্ন বিলে ফুঁটছে পদ্ম ও লাল শাপলা। এটি ভ্রমন পিয়াসীদের আকৃষ্ট করছে । গ্রামীন পরিবেশে দৃষ্টিনন্দন সড়ক ও পরিবেশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই দর্শনার্থী টানছে এই সড়ক ।
টুঙ্গিপাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের এলজিইডি প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ বলেন, সড়কটি নির্মাণের আগে শুস্ক মৌসুমে তারাইলসহ আশে পাশের ১০ গ্রামের মানুষের টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া উপজেলা সদরে যাতায়াত করতেন ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার ঘুরে। বর্ষায় বাঘাইড় বিল নৌকায় পাড় হয়ে তাদের উপজেলা সদরে আসতে হত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ উপজেলার মানুষদের ভোগান্তি নিরসনে ৬ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যায়ে আমরা সাড়ে ৪ কিলোমিটার পরিবেশ বান্ধব ইউনিব্লকের রাস্তা তৈরি করে দিয়েছি।এতে ১০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত সহজ হয়েছে। ভোগান্তি কমেছে প্রত্যন্ত বিল এলাকার মানুষের। তারা এখন সহজে উৎপাদিত কৃষি পন্য, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ পরিবহন করতে পারছেন।
উপজেলার তারাইল গ্রামের চয়ন শিকদার, কামাল হোসেন সহ অনেকে বলেন, আগে তারাইল থেকে জামাইবাজার, পাকুরতিয়া ও বাশবাড়িয়া ঘুরে টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া যেতে দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগতো। এতে একদিকে যেমন ব্যাপক সময় লাগতো তেমনি ভোগান্তিও বাড়তো। অর্থ ব্যয় হত বেশি। কিন্তু এই ইউনিব্লকের সড়ক নির্মিত হওয়ার পর তারাইল থেকে টুঙ্গিপাড়া যেতে ২০ মিনিট সময় লাগে।কোটালীপাড়া যেতে সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট এই সড়কের কারণে আমাদের ১০ গ্রামের লাখো মানুষের যাতায়াত সহজ হয়েছে।
তারাইল গ্রামের কৃষক বলরাম বিশ্বাস বলেন, সড়কটি দিয়ে আমাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য , মঃস্য ও প্রাণি সম্পদ পরিবহন এবং বাজারজাত করতে পারছি। আমাদের পণ্য এখন পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা যাচ্ছে। তাই পণ্যের ন্যয্য মূল্য পেয়ে বাড়তি আয় করতে পারছি।
বাগেরহাট থেকে আসা দর্শনার্থী দোলা বিশ্বাস বলেন, এখানকার সড়ক ও পরিবেশ দুটোই খুবই মনোরম। দুই পাশের বিভিন্ন ধরনের গাছ পুরো রাস্তায় ছায়া ফেলেছে। এছাড়া রাস্তার পাশে বিলগুলোতে পদ্ম ও লাল শাপলা প্রকৃতির সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আমার কাছে এটি খুবই ভাল লেগেছে। আমি এখানে বারবার আসতে চাই।
গোপালগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এহসানুল হক বলেন, সাধারনত সড়ক নির্মাণ করতে ইটভাটার ইট ব্যবহার করা হয়। ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় কৃষিজমির ব্যাপক ক্ষতি হয়। আর ইউনিব্লক তৈরিতে কোন ক্ষতিকর কোন পদার্থ ব্যবহার করা হয় না। বালি, পাথরকুচি ও সিমেন্টের মিশ্রনে তৈরি করা হয় ইউনিব্লক। পরে প্রখর রোদে শুকিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করা হয়। তাই ক্ষতিকর কোন বিষয় না থাকায় ইউনিব্লক সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব। খরচ একটু বেশি হলেও দেশীয় উপাদান দিয়ে ইউনিব্লক বানানো যায়। ইট-বিটুমিনের চেয়ে ইউনিব্লকের রাস্তা অনেক গুন বেশি টেকসই ও মজবুত ।
ওই প্রকৌশলী আরও জানান, ভাটায় তৈরি ইট দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করলেও বড় বড় যানবাহনের চাপ সহ্য করতে পারে না। সড়ক নির্মাণের কয়েকবছর পরই সংস্কারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ইউনিব্লকগুলোর পাশে খাজকাটা থাকে। যখন পাশাপাশি ব্লকগুলো বসানো হয় তখন খুব সহজেই ভাজে ভাজে পড়ে যায়। এর ফলে বড়-বড় যানবাহনের লোড প্রতিটা ব্লকে সমানভাবে পড়ে। যেটা ইটের ক্ষেত্রে হয় না। এছাড়া বৃষ্টি হলেও ইউনিব্লকের তৈরি সড়ক পিচ্ছিল হয় না। টুঙ্গিপাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে প্রথম একটি ইউনিব্লক সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন সড়কটি ওই এলাকাকে বদলে দিয়েছে। আগামীতে এই জেলায় বেশ কিছু সড়ক ইউনিব্লক দিয়ে তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট