এস এম আকাশঃ
পাবনা জেলার বিশিষ্ট কবি ডাঃ আব্দুল হালিম মাস্টার এর আজ ১২ নভেম্বর
৬৪তম জন্মদিন!কবি ডাঃ মোঃ আব্দুল হালিম মাস্টার(সরদার)১৯৫৮ সালের ১২ নভেম্বর পাবনা জেলার আটঘড়িয়া উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের ফলিয়া গ্রামে পিতৃগৃহে জন্মগ্রহন করেন।
পিতা প্রয়াত ডাঃ আহম্মদ আলী সরদার তৎকালীন জজের জুরি ছিলেন কলকাতা থেকে এমবি পাশ করে এসে এলাকার লোকদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন।
মাতা খোদেজা আহমদ ছিলেন উচ্চ প্রাইমারী ব্রিটিশ পাশ ক্লাস টু ও ক্লাস ফোরে বৃত্তি প্রাপ্ত ছাত্রী।
পিতা ও মাতাদ্বয়ের ২৮ সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী কবি হালিম
তার শৈশবেই লেখালেখির প্রতি প্রবল ঝোঁক প্রদর্শন করেন।
১৯৭৭ সালে পাবনা ইসলামীয়া কলেজে অধ্যায়ন কালীন সময়ে তার প্রথম কবিতা “আজব ফুল” দেওয়াল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
সাংসারিক ও পারিপার্শ্বিক চাপে পড়ালেখা বেশিদুর এগোতে পারেননি এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়েই
সংসার জীবনে ঢুকে পড়েন।
কর্ম ব্যাস্ততা ও রুটি রুজির চাপ তাকে বেশি পথ প্রশস্ত করতে দেয়নি।
তিনি ইসলামীয়া কলেজে অধ্যায়ন কালীন সময়ে হিড়িন্দা বাজারে দোকানদারী করে ফেরার সময় ক্লান্ত শরীরে বাবলা গাছের নিচে শুয়ে পড়েন।
তখন স্বপ্নের মাঝে এক সাধু পুরুষের সাক্ষাৎ লাভ হয় এবং তিনি হিড়িন্দায় একটি মাদ্রাসা করতে বলেন!
তখন ঘুম ভেঙ্গে গেলে তিনি বিচলিত হয়ে পড়েন!
বাড়ী ফিরে স্বপ্নে দেখা নির্দেশনার কথা তার মামা আলহাজ্ব মহির উদ্দিন মোল্লা কে বলেন ও তৎকালীন নেতা ও ফৈলজানা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান কে বলেন।
তখন থেকে তার স্বপ্নে দেখা নির্দেশ মত হিড়িন্দা এবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে নিজেই শিক্ষকতার দায়িত্ব নিয়ে নিজেকে সঁপে দেন!
কিন্তু খোলা স্থান ও পরিত্যক্ত বিস্তৃর্ন মাঠ হওয়ার কারনে শিক্ষা প্রসার ও বিস্তারে তখন বাজার বসানোর উদ্যোগ গ্রহন করেন ঐকান্তিক ইচ্ছায়!
ছয় গ্রামের সকল পর্যায়ের লোকজনকে সম্পৃক্ত করে উন্মুক্ত মিটিং করে আলহাজ্ব মহির উদ্দিন মোল্লা, আজিজুর রহমান সহ গম্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তা ও পরামর্শ মোতাবেক হাট বসানোর উদ্যোগও গ্রহন করেন।
কিয়াম উদ্দিন, মমিন উদ্দিন, সাইদুল ইসলাম, জয়দুল ইসলাম কে সাথে নিয়ে বিভিন্ন হাটে গিয়ে কানচ/টিন বাজায়ে/করফায় ঘোষনা দিয়ে সপ্তাহে দুই দিন শনিবার ও বুধবার হাট বসাতে সক্ষম ও সমর্থ হন!
নতুন হাটে দুর দুরান্ত থেকে দোকানীরা বিভিন্ন প্রকার মালামাল নিয়ে আসার পরে বেচা বিক্রি শেষে অবশিষ্ট মালামাল কাঁচা মালামাল সব কিছু কবি হালিম অর্ধেক দামে কিনে এলাকার দরিদ্র লোকেদের মাঝে বন্টন করে দিতেন।
তার স্বপ্ন আশা বাস্তবায়ন করার জন্য!
তখন দুর দুরান্তের লোকেরা খুশি হয়ে হাটের নাম দেন হালিম পুর হাট বাজার।
কবি হালিম তার জীবনে অর্জিত সব সম্পদ ব্যয় করে হাট প্রতিষ্ঠায় নিজেকে সমর্পণ করেন। বিনা
বেতনে পনের বছর শিক্ষকতা করে এবতেদী শাখায়! হিড়িন্দা দাখিল মাদ্রাসায় রুপান্তর করেন।
পরবর্তী কালে হিড়িন্দা দাখিল মাদ্রাসা এমপিও ভুক্তির সময়ে তিনি শিক্ষকতা থেকে রাজনৈতিক কারণে অবসর নেন।
তিনি ১৯৮০সরকারী ভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে পল্লী চিকিৎসক হিসেবে এলাকায় সুদীর্ঘ দিন সেবা করে আসছেন।
নানান ঘাত-প্রতিঘাতের মাঝে তিনি লেখালেখি থেকে কখনোই নিজেকে গুটিয়ে নেননি!
তিনি একজন বাস্তববাদী কবি ও লেখক।
তার লেখালেখির মূল্যায়নে পাঁচটি পদক ও দশের অধিক সম্মাননা সনদ লাভ করেছেন।
লেখালেখির পর্যায়ে বাংলাদেশ ও ভারতের লেখকদের সমন্বয়ে শতাধিক যৌথ কাব্য গ্রন্থে তার লেখা স্থান পেয়েছে।
তার একক কাব্য গ্রন্থ দুটি “স্মৃতির পাতা”
ও
“স্মৃতির পাতা-২”
পাঠক অনুরাগী মহলে যশ সুনাম কুড়িয়েছে।
তিনি বাস্তবিক ও জীবন ঘনিষ্ঠ লেখার সাথে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
তার স্বপ্নের হাট আজ প্রতিষ্ঠিত এবং হিড়িন্দা দাখিল মাদ্রাসাও এমপিও ভুক্ত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু আজ তার প্রতি কদাচিৎ মুল্যায়নও এখন আর পরিলক্ষিত হয়না। এহেনও বাস্তবতাও তাকে পীড়া দেয়…
তিনি একজন প্রকৃত জীবন ঘনিষ্ঠ লেখক হিসেবে সাধারণ শ্রেনী পেশার মানুষের মনে যায়গা করে নিয়েছেন।
তিনি তার স্বপ্নের হাট কবিতায়
আশা ও স্বপ্নের কথা অনায়াসেই তুলে ধরেছেন।
তিনি স্বপ্নের হাট নিয়ে কবিতা লিখেছেন…
আমার স্বপ্নের হাট “হিড়িন্দা”
কবি ডাঃ মোঃ আব্দুল হালিম সরদার
ফলিয়া জন্ম আমার বসত করি সোহাগবাড়ী-
ব্যবসা করতাম আমি অবস্থান করে কচুগাড়ী,
কচুগাড়ী হতে আমি ব্যবসা দোকান করিয়া-
হিড়িন্দা হয়ে আমি যে রোজ যেতাম ফিরিয়া।
ফিরে যাবার কালে হিড়িন্দা বাবলা তলা-
শুয়ে পড়তাম বিভোর ঘুমে মনে নিয়ে জ্বালা,
হঠাৎ স্বপ্নে এক দরবেশ আমায় তখন কয় ডেকে-
এখানে তুমি হাট-বাজার লোকজন যাবে দেখে!
তুমি হবে সেই হাটের প্রতিষ্ঠাতা কর্তা ব্রত-
সেই থেকে হাট গড়ায় চেষ্টা করলাম মনের মত,
হাট বসাতে গিয়ে যখন কেউ দিলোনা জমি-
তখন হিড়িন্দা মাদ্রাসা করার প্রতিশ্রুতি দিলাম আমি……
হাট গড়ার জন্য আমি গিয়েছিলাম অনেক খানে-
সে সব কথা বলতে গেলে বড় ব্যথা লাগে মনে,
এলাকায় তখন নেতা ছিলেন আজিজুর রহমান-
লোকে তাকে দিতো অনেক ভক্তি-শ্রদ্ধা ও সম্মান।
তার কাছে গিয়ে আমি বললাম স্বপ্নের কথা যখন-
বললেন হাট তুমি গড়তে পারবেনা নরম তোমার মন,
হিড়িন্দাহাট সেই থেকে আজ এখনও টিকেআছে-
আমার স্বপ্নের হাট “হিড়িন্দা” এটা বলির সবার কাছে।
আত্মবিশ্বাস ভক্তি মনে জোর রেখে চলে পথ-
আল্লাহর মেহেরবানী ও লোকের সহযোগীতায় নিলাম শফথ,
হবে হাট-বসবে হাট দেশ-বিদেশের লোক আসবে-
সপ্তাহে দুইদিন শনিবার-বুধবার হিড়িন্দা হাট বসবে…
ভালোবেসে লোকে যে যা নিয়ে আসতো হাটে মালামাল-
বেচা কেনার শেষে থাকতনা কোন কিছু হতোনা আকাল,
ভালোবেসে লোকেরা হাটের নাম দিলো “হালিমপুর”-
ধীরে-ধীরে স্বপ্ন পূরন হলো সুবিস্তৃত সুদৃঢ় সুমধুর!
“হালিমপুর” হোক বা হিড়িন্দা হাট হোক যায়না কিছু এসে-
টিকে থাকুক আমার স্বপ্নের হিড়িন্দা হাট ভালোবেসে,
হে আল্লাহ তুমি আমার স্বপ্নের হাট-কে অমর করো-
আহৃবান করি সকলেই স্বপ্নের বলয়ে সৎ ও সহজ জীবন গড়ো……
ব্যক্তি জীবনে পাঁচ সন্তানের জনক তিনি।
আজকে কবি ডাঃ আব্দুল হালিম এর ৬৪ তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রইলো নিরন্তর অবিরাম অন্তহীন অগ্রযাত্রায়!
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট