রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, কসমেটিকস প্রসাধনী দাম বেড়েছে বিপাকে নারীরা
একটি মেসে থেকে পড়াশোনা করেন নুসরাত আফরিন। পাশাপাশি একটি নাট্যদলের কর্মী হিসেবেও কাজ করছেন। পড়াশোনা এবং তার হাত খরচের টাকা আসে পরিবার থেকে। মাপা অংকের সেই টাকারই কিছু অংশ তিনি ব্যয় করেন প্রসাধন সামগ্রী কিনতে। তবে গেল তিন মাস ধরে তার সেই টাকাতেও টান ধরেছে। প্রায় প্রতিটা পণ্যেরই দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন এই তরুণী।
একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অন্যদিকে ডলারের দাম বেড়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। ফলে বাদ যায়নি নারীদের প্রসাধনী পণ্যও। এসব পণ্যের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৮০ শতাংশ। সোমবার সরেজমিনে রাজধানীর বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্স ও কসমেটিক্স মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই মেয়েদের ময়েশ্চারাইজিং বডি লোশন, ক্রিম, চুলের তেলসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৮০ শতাংশ।
একটি শপিং কমপ্লেক্সের সামনে তরুণী ফাহমিদা তৃষা সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আমাদের দেশে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে, সেই পণ্যের দাম আর কমে না। আমি রবিবার রাজধানীর কয়েকটা মার্কেটে গেছি কেনাকাটা করার জন্য। এক ডজন রঙিন কাঁচের চুড়ি ৪৫০ টাকা বলছে দোকানদার। কিন্তু প্রায় দেড় মাস আগে একই কাঁচের চুড়ি ২৫০ টাকায় কিনেছি। দেড় মাসের ব্যবধানে ৮০ শতাংশ বাড়িয়ে দিলো। ব্যবসায়ীরা যার কাছে যতো বেশি দামে বিক্রি করতে পারে। এমনিতেই বাজারে সবকিছুর দাম বেড়েছে। এর মধ্যে যদি এসব জিনিসের দাম বেড়ে যায় তাহলে মানুষ খাবে না পরবে?
ফাহমিদা তৃষা বলেন, কী আর বলবো! ১০০ গ্রামের যে ডাব সাবান ১২৫ টাকায় কিনেছি, সেই ডাব সাবান এখন ১৪০ টাকা কিনতে হচ্ছে। আমি হিসাব করে দেখলাম এসব জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে প্রতি মাসে অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে।
নাট্যকর্মী নুসরাত আফরিন বলেন, আমার মতো হাজার হাজার মেয়ে কসমেটিক্স কিনতে গিয়ে রিতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। যে টিপের পাতা ৩০ টাকায় কিনতাম এখন সেই ছোট টিপের পাতা ৪০ থেকে ৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এর মধ্যে শীতের মৌসুম শুরু হচ্ছে। ফলে কিনতে হচ্ছে ময়েশ্চারাইজিং বডি লোশন, ক্রিমসহ অনেক কিছু।
নুসরাত আফরিন বলেন, ২০০ মিলি পন্ডস্ ট্রিপল ভিটামিন ময়েশ্চারাইজিং বডি লোশন ২০০ থেকে ২২০ টাকায় কিনেছি। এখন সেই লোশন ২৪০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ রকম বেশি দামে সবকিছু কিনতে থাকলে তো চলাফেরা করতে সমস্যায় পরতে হবে।
আশরাফুন নাহার মালা নামে আরেক তরুণী বলেন, কিছুদিন পরপর বাজারে গেলেই দেখা যায় দাম বেড়েছে। দুই মাস আগে যে ওড়না ২০০ টাকায় কিনেছি সেই ওড়না মার্কেটে এখন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আশরাফুন নাহার মালা বলেন, গ্লো এন্ড লাভলী বড়টা ২২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাক্স সাবান ছিল ৫০ টাকা, এখন ৭৫ টাকা, গ্লো অ্যান্ড লাভলি ফেস ওয়াশ ১৫০ থেকে বেড়ে ১৬০ টাকা, কুমারিকা হেয়ার ফল কন্ট্রোল ৩০০ মিলি ২৫০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ রকম প্রতিটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পরও সরকারের কাছ থেকে কোনো ধরনের উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না। আর ভোক্তার অভিযান মাঝে মধ্যে দেখা যায়। কিন্তু দাম বাড়তেই থাকে, কমে না।তানিয়া আক্তার বলেন, যে ভিট হেয়ার রিমুভ ক্রিম ১০০ গ্রাম- ২৮০ টাকায় কিনেছি, সেটা এখন ৩০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সানসিল্ক ব্ল্যাক শ্যাম্পু ১৭০ মিলি ২৭০ টাকা থেকে ১০ টাকা বেড়ে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যবৃদ্ধি। এর মধ্যে কয়েকমাস ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। আমরা সবাই জানি প্রতিটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আশা করছি খুব শিগগির দেশের এই অস্থিরতা কমবে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট