বি.এম রিয়াদুর রহমান রিয়াদ, স্টাফ রিপোর্টার।
শেরপুর ছানার পায়েস, ছানার চপ, অনুরাধার দই এর জন্য বিখ্যাত এবং ময়মনসিংহ বিভাগে অবস্থিত একটি জেলা। শেরপুর জেলা ইতিপূর্বে জামালপুর জেলার একটি মহকুমা ছিল। ১৯৮৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এটিকে জেলায় উন্নীত করা হয়। পূর্বে ১৮২৯-২০১৫ পর্যন্ত বর্তমান শেরপুর ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত ছিল। পরে ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণা করা হলে শেরপুর ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হয়।
শেরপুর জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণ ও পশ্চিমে জামালপুর জেলা ও পূর্ব দিকে ময়মনসিংহ জেলা অবস্থিত। এ জেলার আয়তন ১,৩৬৩.৭৬ বর্গকিলোমিটার এবং রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ১৮৩ কিলোমিটার।
শেরপুর জেলায় ৫টি উপজেলা, ৪টি পৌরসভা ও ১৪৩-১৪৫ পর্যন্ত ৩টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।
উপজেলাগুলো হলো: ঝিনাইগাতী, নকলা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর সদর ও শ্রীবরদী উপজেলা।
শেরপুর অঞ্চল প্রাচীনকালে কামরূপা রাজ্যের অংশ ছিল। মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে এই এলাকা “দশকাহনিয়া বাজু” নামে পরিচিত ছিল। পুর্বে শেরপুরে যেতে ব্রহ্মপুত্র নদ খেয়া পাড়ি দিতে হত। খেয়া পারাপারের জন্য দশকাহন কড়ি নির্ধারিত ছিল বলে এ এলাকা দশকাহনিয়া নামে পরিচিতি লাভ করে। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ভাওয়ালের গাজী, ঈসা খানের বংশধর থেকে দশকাহনিয়া এলাকা দখল করে নেয়। দশকাহনিয়া পরগনা পরবর্তীতে গাজী বংশের শেষ জমিদার শের আলী গাজীর নামানুসারে শেরপুর নামে নামকরণ করা হয়।
ওয়ারেন হেস্টিংস থেকে কর্ণওয়ালিস-এর সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং স্থানীয় জমিদারদের বিরুদ্ধে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ অনুষ্ঠিত হয়; ফকির আন্দোলনের নেতা টিপু শাহ এই এলাকায় সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে এবং গরজরিপার তার রাজধানী স্থাপন করেন। খোশ মুহাম্মদ চৌধুরীর নেতৃত্বে শেরপুরের কামারের চরে ১৯০৬, ১৯১৪ ও ১৯১৭ সালে কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৮৩৮-৪৮ সালে নানকার, টঙ্ক, বাওয়ালী, মহাজনী, ইজারাদারি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শেরপুরে কমিউনিস্টরা বিদ্রোহ করে। ১৮৯৭ সালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্প ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ পশ্চিম দিকে পরিবর্তন করে এবং যমুনার সঙ্গে একত্রিকরণ করতে বাধ্য করে; এটি অনেক প্রাচীন ভবনেও মারাত্মক ক্ষতি করে।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে শেরপুর ১১ নং সেক্টরের অধীনে ছিলো। ৭ ডিসেম্বর শহরের শহীদ দারোগ আলী পৌর পার্কে হেলিকেপ্টারযোগে অবতরণ করেছিল ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জগজিৎ সিং অরোরা এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য এ জেলার ১ জন বীর বিক্রম, ২ জন বীর প্রতীক উপাধি পেয়েছেন। এরা হলেন, শহীদ শাহ মোতাসীম বিল্লাহ খুররম বীর বিক্রম, কমান্ডার জহুরুল হক মুন্সি বীর প্রতীক ও ডাঃ মাহমুদুর রহমান বীর প্রতীক।
বর্তমান শেরপুর জেলার উত্তর সীমান্তের গারো পাহাড় ও তার প্বার্শবর্তী সমতল এলাকায় গারো, হাজং, কোচ, ডালু, বানাই এবং রাজবংশী ইত্যাদি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ শতশত বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন কোচ ভাষা, গারো ভাষা প্রভৃতি নিজস্ব ভাষায় কথা বলে।
এ জেলা যে তিনটি ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ছিলো সেগুলো হলো:
১৯৫০-এর বরিশাল দাঙ্গা, টঙ্ক আন্দোলন এবং পাগলপন্থি বিদ্রোহ।
এ জেলা মূলত কৃষি প্রধান এবং এ জেলায় বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদিত হয় যার মধ্যে আছে: ধান, পাট, গম, সরিষা, আলু, বাদাম, আখ সহ বিভিন্ন ধরনের তরিতরকারী।
শেরপুর জেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে:
১.কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, শেরপুর।
২.শেরপুর সরকারি কলেজ।
৩.শেরপুর সরকারী মহিলা কলেজ।
৪.শেরপুর সরকারী ভিক্টোরিয়া একাডেমী।
৫.শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
৬.শেরপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র শেরপুর জেলার একমাত্র নদ। এছাড়া প্রধান নদীসমূহ হচ্ছে:
কংস, ভোগাই, কর্ণঝরা, চেল্লাখালি, ঝিনাই, দুধদা, মহারশি, মালিঝি, সোমেশ্বরী, মিরগী, দশানি ইত্যাদি।
জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানসমূহ হচ্ছে:
গজনী অবকাশ কেন্দ্র,
নাকুগাঁও স্থলবন্দর,
মধুটিলা ইকোপার্ক,
ঘাগড়া খান বাড়ি জামে মসজিদ,
গড়জরিপা বার দুয়ারী মসজিদ
মাইসাহেবা জামে মসজিদ,
কসবা মুঘল মসজিদ,
মঠ লস্কর বারী মসজিদ,
আড়াই আনী জমিদার বাড়ি,
পৌনে তিন আনী জমিদার বাড়ি,
নয়আনী জমিদার বাড়ি,
নয়আনী জমিদার বাড়ির রংমহল,
নয়াআনী বাজার নাট মন্দির,
গোপী নাথ ও অন্ন পূর্ন্না মন্দির,
লোকনাথ মন্দির ও রঘুনাথ জিওর মন্দির,
বারোমারি গীর্জা ও মরিয়ম নগর গীর্জা,
নয়াবাড়ির টিলা,
রাজার পাহাড় ও বাবেলাকোনা,
পানিহাটা-তারানি পাহাড়,
পানি হাটা দিঘী,
সুতানাল দীঘি,
গড়জরিপা কালিদহ গাং এর ডিঙি,
গড়জরিপা ফোর্ট
নালিতাবাড়ির রাবারড্যাম,
অর্কিড পর্যটন কেন্দ্র,
শাহ কামাল এর মাজার
শের আলী গাজীর মাজার,
জরিপ শাহ এর মাজার,
অলৌকিক গাজির দরগাহ, নকলা,
মুন্সি দাদার মাজার, নকলা,
বেড় শিমুল গাছ, নকলা।
এ জেলায় বাংলাদেশের কিছু পরিচিত মুখ রয়েছেন যাদের মধ্যে আছেন:
বদরুল আলম (ভাষা সৈনিক)
শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী – শিক্ষাবিদ
ডা. নাদেরুজ্জামান খান একজন বাংলাদেশী বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা।
খন্দকার আবদুল হামিদ- সাংবাদিক ও সাবেক মন্ত্রী
ফকির করম শা – শেরপুরে সংঘটিত উনিশ শতকের প্রথমদিকের একজন পাগলপন্থি বিদ্রোহী ও সুফি সাধক
টিপু শাহ – ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি-বিরোধী আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব
নিগার সুলতানা – বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের ডান হাতি ব্যাটার ও উইকেট রক্ষক
মতিয়া চৌধুরী – সাবেক কৃষিমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য
বজলুর রহমান – স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক
এ জেলা থেকে বিভিন্ন ধরনের দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পুত্রিকা প্রকাশিত হয় যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
শেরপুর টাইমস
শেরপুর নিউজ ২৪
দেশবার্তা বিডি
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট