আসাদ আলী কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ ভারত
ভারতের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার রাজারহাট-বিষ্ণুপুর বুড়োশিবতলার প্রাচীন কালীপুজো প্রাচীন বটবৃক্ষ
উত্তর ২৪ পরগণা জেলার রাজারহাট-বিষ্ণুপুর একটি ঐতিহাসিক প্রাচীন বর্ধিষ্ণু জনপদ। এই এলাকার বিষ্ণুপুরের বুড়োশিবতলা র কালীপুজো দ্বি শতাব্দীর ও বেশি প্রাচীন। এখানে বিশালাকার প্রাচীন একটি বটবৃক্ষের নীচে (প্রাচীন বটবৃক্ষের মূল গুঁড়ি টি আজ আর নেই) বেশ বড়ো একটি প্রাঙ্গন সহ কালীমন্দির, শিবমন্দির, চৈতন্য মন্দির, মনসার থান আছে। এই শিবমন্দির ঘিরে আছে লোককথা যা অন্যত্র আমি আমার এক লেখক বন্ধু কে জানিয়েছিলাম এবং আমার এই এলাকার ঐতিহাসিক স্থান সমূহ ঘুরিয়ে দেখিয়ে ছিলাম ও বিষয়গুলি বর্ননা করেছিলাম একটি গ্ৰন্থ রচনার জন্য, তিনি সেই গ্ৰন্থে আমার নাম ও সহযোগিতা র কথা উল্লেখ করেন, কলেজ স্ট্রিট এর নামী প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয় এবং অল্পদিনের মধ্যে সবই বিক্রি হয়ে যায়। যাইহোক সে অন্য প্রসঙ্গ, — আমাদের ছোট বেলায় তখন ঘরে ঘরে এত ইলেকট্রিক বাতি বা পাখার চল ছিল না, আমরা কিশোর যুবক রা প্রচন্ড গরমে শিবমন্দিরের শ্বেত পাথরের দালানে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম, শিবমন্দিরের চারধারে ছিল শ্বেতপাথরের দালান যা খুবই ঠান্ডা থাকত।অন্যান্য সময় মন্দির প্রাঙ্গণে গুলি, লাট্টু, ডাংগুলি,গোলা,ঘোড়েল,লাল লাঠি প্রভৃতি কত রকমের খেলাই না খেলতাম আমরা। এখনকার প্রজন্ম তার নামই হয়তো শোনেনি। তবে হারিয়ে যাওয়া এইসব খেলা সম্পর্কে আমি কাগজে উত্তর সম্পাদকীয় লিখেছি। তখনকার সময়ে মানুষের মধ্যে এত ভেদাভেদ ছিল না, সমস্ত সমাজ ই ছিল অতি পবিত্র, একজনের বিপদে আর একজন ছুটে যেত, আনন্দ উৎসবে সবাই একসাথে আনন্দ করত, মাত্র ৮/১০ বছর আগে পর্যন্ত ও এরকম পবিত্র পরিবেশ বিরাজ করতো সমাজে। তারপর কি যে হলো কোন শনির নজর পড়লো ভারতের উপর এখন প্রায়ই কাগজে টেলিভিশন এ দেখতে পাওয়া যায় ঠাকুর প্রনাম এর কারণে দলিত বা আদিবাসী শিশুকে প্রচন্ড পেটানো, মন্দিরের দালানে ওঠায় প্রচন্ড পেটানো, পুজোর প্রসাদ নেওয়ায় প্রচন্ড পেটানো, কুয়োর জল খাওয়ায় প্রচন্ড পেটানো, আদিবাসী যুবক ঘোড়ায় চড়ে বিবাহ করতে গেলে প্রচন্ড পেটানো, দলিত-আদিবাসী এরা দলবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করেনা কেন? রুখে দাড়ায় না কেন? সমাজে এরাইত বেশি অংশ, উচ্চবর্ণ ত খুবই কম। যাইহোক, আমরা ছোট বেলায় কালীপুজো র অনেক আগে থেকেই দেখতাম তার প্রস্তুতি, মন্দিরের সামনে একটি বড়ো এবং একটি ছোট অর্থাৎ মা ও শিশু কুমির তৈরী করা হতো কাদামাটি, কাঁচা খেজুর ও শামুক দিয়ে। মাটি দিয়ে কুমিরের পূর্ন অবয়ব তৈরী করার পর তার গায়ের উপর সবুজ কাঁচা খেজুর পুতে দেওয়া হতো এবং বড়ো দুটি শামুক দিয়ে কুমিরের চোখ বানানো হতো। নির্দিষ্ট দিনে হতো কালীপুজো। সন্ধ্যার পর যত রাত্রি গাঢ় হতে থাকত পুজোর জৌলুস যেন তত খোল তাই হত। এই রাত্রি টি হত অমাবস্যার রাত্রি ঘুটঘুটে অন্ধকার, আমাদের পাড়ার দক্ষিণ পশ্চিম কোন বরাবর একটি সুবিশাল ধানমাঠ আছে, আমরা কিশোর যুবকেরা সেই মাঠে ভূত দেখতে যেতাম। গ্ৰামগঞ্জে একটি ধারণা আছে এই রাত্রে অর্থাৎ কালীপুজো র অমাবস্যার রাত্রে ভূত, প্রেত প্রভৃতি র আনাগোনা বেশি হয়, আর একটি ধারণা এই কোন চোর চুরি করতে পারলে অন্যান্য সময়ের চুরিতে সে কোনদিন ধরা পড়ে না। অনেক পরে ভূতের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারি, তখন আমি অষ্টম শ্রেণী তে পড়ি, এরকম এক কালীপুজোর রাত্রে ১০/১১ টার সময় বন্ধুদের সাথে ভূত দেখতে গেলাম সেই দক্ষিণ মাঠে, চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার আমার অপেক্ষা করছি কখন ভূত আসবে, বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না, একটি দুটি করে ১০/১৫ টি ভূত জ্বল জ্বল করে ভাটার মতো তাদের চোখ জ্বেলে মাঠের এমাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত ছোটাছুটি শুরু করে দিল, মাঠের এপাশে ঘন অন্ধকারে কোমর পর্যন্ত ধানক্ষেতের মধ্যে দাড়িয়ে আমরা গা ঘেঁসাঘেসি করে একে অপরের ভরসায় দেখছি আর রোমাঞ্চ অনুভব করছি। না আমার অবস্থাটা তখন একটু অন্যরকম ছিল, আমি প্রায় নিশ্চিত ছিলাম যে মাঠের অপর দিকে জামাল পাড়ার ছেলেরা পাটকাঠি জ্বালিয়ে দৌড়দৌড়ি করছে, এবং মনে মনে ঠিক করলাম পরের দিন স্কুলে গিয়ে ক্লাসের জামাল পাড়ার বন্ধুদের কে জিজ্ঞাসা করবো, পরের দিন স্কুলে গিয়ে আমার অনুমান সত্যে পরিণত হল, উদ্ঘাটন হলো দীর্ঘ কালের ভুল ধারণার। যাইহোক মন্দিরের সামনে একটু শক্ত ধরণের কাদা মাটি দিয়ে উঁচু করে সেখানে হাঁড়িকাঠ পোতা হয়, এখানেই প্রথমে চালকুমড়া এবং পরে ধারালো খড়্গ দিয়ে পাঁঠা বলি দেওয়া হয় এক কোপে, উঁচু মাটির ঢিপি টা খড়্গটির আঘাত শ্লথগতির করে দেয় যাতে করে খড়্গটি ভেঙে না যায়।পাঁঠা বলি দেওয়ার সাথে সাথে ছিটকে যাওয়া ছিন্ন মস্তক টি একটি নতুন মাটির সরাই করে পুরোহিত মশাই কালী প্রতিমার সামনে রাখেন অর্থাৎ নিবেদন করেন, আর ধড়টি ছাল ছাড়িয়ে ভোগের জন্য রান্না করা হয়, মন্দিরের অপর দিকে উনুনে। এই ভাবেই চলে আসছে আমার দেখা, আমাদের দেখা দুই শতাব্দীর অধিক কালে র এই প্রাচীন কালীপুজো। কিন্তু একটি প্রশ্নের উত্তর আমার কৌতূহল মনকে আমি চেষ্টা করেও দিতে পারিনি যে উত্তর হয়তোবা না জানা অনেক বিষয়কে সামনে আনবে। তা হলো কালীপুজো র সাথে কুমিরের কি সম্পর্ক? এ ব্যাপারে কোন জ্ঞাণী ব্যাক্তি যদি ভবিষ্যতে আলোকপাত করেন ভালো হয়।
।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট