নুর আমিন,খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি মুক্তিপন না দেওয়ায় হত্যা
খানসামা উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের কায়েমপুর ডাক্তারপাড়া গ্রামে। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ ছিলেন আরিফুজ্জামান। আরিফুজ্জামান ডাক্তারপাড়া গ্রামের কৃষক আতিউর রহমানের ছেলে। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়তেন।
আরিফুজ্জামানকে ঘুরি বেড়িয়ে যাওয়ার কথা বলে শরিফুল ইসলাম(২৪)। সন্ধ্যায় ভাড়া বাসাতেও নিয়ে গিয়ে জিম্মি করে আরিফুজ্জামানের বাবাকে ফোন করে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। মুক্তিপন না পেয়ে ওই রাতেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বস্তাবন্দী অবস্থায় বাড়ির আঙ্গিনায় পুঁতে রেখেছেন। অপহরণকারী শরিফুল ইসলাম।
নিখোঁজের পর থেকে আরিফুজ্জামানকে উদ্ধারে কাজ করছিল পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। স্থানীয় সূত্রের ভিত্তিতে ঘটনার পরেরদিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শরিফুল ইসলাম(২৪) নামের এক যুবককে আটক করে খানসামা থানা পুলিশ। রোববার রাত ৯টায় আরিফুজ্জামানকে অপহরণ করে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন শরিফুল। শরীফুলের কথা অনুযায়ী রোববার রাত সাড়ে দশটায় উপজেলার পাকেরহাট বাবু মেম্বারপাড়া এলাকায় তাঁর ভাড়া বাসার আঙ্গিনা হতে শিশু আরিফুজ্জামানের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খানসামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) চিত্ত রঞ্জন রায়।
শরিফুল ইসলাম একই পাড়ার আব্দুল মালেকের ছেলে। খানসামা বিএম কলেজেপাকেরহাট এলাকায় একটি বাসায় ভাড়ায় থেকে কম্পিউটার ট্রেড নিয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি সেখানে কিছু ছাত্রকে কম্পিউটার প্রশিক্ষনও দেন শরিফুল।
নিহত শিশু আরিফুজ্জামানের বাবা আতিউর রহমান বলেন, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত আরিফুজ্জামান তাঁর সাথে ক্ষেতে রসুন লাগানোতে সহযোগিতা করেছেন। তারপর নদীতে গোসল করে নামাজে গেছেন। নামাজ থেকে ফিরে একসাথে দুপুরের খাবারও খেয়ে ছিলেন। এরপর বিকেলে বাইরে খেলতে গেছে। সন্ধ্যার অনেক পরও যখন বাসায় ফিরে না আসায় খোঁজাখুঁজি শুরু করি। সন্ধ্যা ৭টায় ফোনে একজন বলে আপনার ছেলেকে কিডন্যাপ করেছি। ছেলেকে পেতে হলে এক লাখ টাকা নিয়ে সৈয়দপুর বাস টার্মিনালে আসেন। টাকা নিয়ে আসলেই আপনার ছেলেকে পেয়ে যাবেন। এরপরই ফোন নাম্বারটিসহ খানসামা থানায় যোগাযোগ করি এবং লিখিত অভিযোগ করি। রাত নয়টার সময় আবারও ওই নাম্বার থেকে ফোন আসে। কিন্তু কোন কথা না বলেই ফোন কেটে দেয়।
দিনাজপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(বীরগঞ্জ সার্কেল) খোদাদাদ সুমন বলেন, ঘটনার পর থেকে পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমের কয়েকটি ইউনিটে ভাগ করে দেন। স্থানীয়দের কাছে আমরা জানতে পারি ঘটনার দিন বিকেল শরিফুলের সাইকেলের পেছনে বসে ঘুরতে দেখা গেছে শিশু আরিফুজ্জামানকে। পরে স্থানীয় সূত্র ও মুক্তিপন চাওয়া ফোন কলের সূত্র ধরে ঘটনা প্রকৃত ঘটনা উদ্ধার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে শরিফুল তাঁর অপরাধ স্বীকার করেছে। টাকার প্রয়োজন থেকেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে শরিফুল। আজ(সোমবার) দুপুর ১টায় বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করা হবে। পরবর্তীতে অন্যান্য আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
প্রেস ব্রিফিং এ উপস্থিত ছিলেন, সুপার জনাব শাহ ইফতেখার আহমেদ, পিপিএম এর সার্বিক দিক-নির্দেশনায় ও নিবিড় তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মোঃ আসলাম উদ্দিন এর নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বীরগঞ্জ সার্কেল) খোদাদাদ হোসেন ও সহকারী পুলিশ সুপার (কাহারোল সার্কেল) মোঃ রওশন আলীর সমন্বয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে খানসামা থানার অফিসার ইনচার্জ চিত্তরঞ্জন রায়, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ তাওহীদুল ইসলাম, এসআই (নিঃ)/ইবনে ফরহাদ, তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ)/মোঃ শামীম মিয়াসহ খানসামা থানা ও ডিবি, দিনাজপুর বোলার সমন্বিত টিম।
প্রেসবিপিং শেষে অপরাধীকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট