হাফিজুর শেখ প্রকাশক ও সম্পাদক
ঐতিহাসিক ১১ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত যশোরে প্রথম ভাষণ দেন আর ধ্বংস নয়, যুদ্ধ নয়, এ মুহূর্তে কাজ হলো যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা,প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আজ ঐতিহাসিক ১১ ডিসেম্বর। বাঙালি জাতির একটি স্মরণীয় দিন। আর যশোরবাসীর জন্য এ দিনটি গৌরব ও অহংকারের। পাক হানাদার বাহিনীর কবলমুক্ত যশোরের মাটিতে এদিন ভাষণ দিয়েছিলেন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ।
যশোর টাউন হল ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আর ধ্বংস নয়, যুদ্ধ নয়। এ মুহূর্তে কাজ হলো যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা।’ সেদিন তিনি সর্বস্তরের মানুষকে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনায় দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছিলেন।অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জনসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ফণিভূষণ মজুমদার, রওশন আলী, মোশাররফ হোসেন, তবিবর রহমান সরদার, এম আর আকতার মুকুল, জহির রায়হান প্রমুখ।জনসভায় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, স্বাধীন এ দেশে ধর্ম নিয়ে আর রাজনীতি চলবে না। আর তাই জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।মুক্ত স্বদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম এ জনসভার খবর সংগ্রহের জন্য উপস্থিত ছিলেন লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিক পিটার গিল, নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সিডনি এসএইচ সানবার্গ, ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিনিধিসহ বহু বিদেশি সাংবাদিক। সেই বহরে ছিলেন কুষ্টিয়ার সাংবাদিক আব্দুল হামিদ রায়হান। সমাবেশের তিনদিন আগেই কলকাতা থেকে ক্যামেরাসহ সরঞ্জামাদি নিয়ে চলে আসেন
যশোরে।যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ এবং পাক হানাদার বাহিনীর নির্মমতার ভয়াবহ সব দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেন। সমাবেশের পর ওইদিনই কলকাতায় ফিরে ছবি প্রিন্ট করে একাধিক সংবাদপত্রে সরবরাহ করেন।আগের দিন ৬ ডিসেম্বর বিকেলের মধ্যেই যশোর শহর থেকে হানাদার বাহিনী পালিয়ে চলে যায়। এদিন বিকেলে মিত্র বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল বারাতের নেতৃত্বে মিত্র ও মুক্তি বাহিনী সেনানিবাসে প্রবেশ করে দখল নেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তির আনন্দে উচ্ছ্বসিত মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ঢল নামে শহরে। পাড়া মহল্লায়ও চলে খণ্ড খণ্ড আনন্দ মিছিল। মুক্তির আনন্দে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে ফেটে পড়ে গোটা জেলার মানুষ। এরপর ১১ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে যশোরে আসেন।মুক্তিযুদ্ধে ১১ ডিসেম্বরের সেই ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন।যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্বাধীনতা মঞ্চটি একই ডিজাইনে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। আশা করছি এখন থেকে প্রত্যেক বছরই এ মঞ্চে ১১ ডিসেম্বর উদযাপিত হবে
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট